Friday 4 September 2015

মুমিনদের শাফা‘আত

মুমিনদের শাফা‘আত 

রহমান রহীম আল্লাহ্‌ তায়ালার নামে-

বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম

 

ক্বিয়ামতের দিন মহান আল্লাহর বিচারের পরে যারা সৎকর্মশীল তারা জান্নাতে চলে যাবে। আর মুমিনরা অন্য মুমিনদের জন্য আল্লাহর কাছে সুফারিশ করবে। ফলে বহু মানুষ জাহান্নাম থেকে মুক্তি পাবে। এ সম্পর্কেই নিম্নোক্ত হাদীছটি।
আবু সা‘ঈদ খুদরী (রাঃ) হ’তে বর্ণিত,
একদা কতিপয় লোক জিজ্ঞেস করল, হে আল্লাহর রাসূল (ছাঃ)! ক্বিয়ামতের দিন কি আমরা আমাদের প্রতিপালককে দেখতে পাব? তিনি বললেন, হ্যাঁ। মেঘমুক্ত দ্বিপ্রহরের আকাশে সূর্য দেখতে কি তোমাদের কষ্ট হয় এবং মেঘমুক্ত আকাশে পূর্ণিমার চাঁদ দেখতে কি তোমাদের কোন অসুবিধা হয়? তারা বলল না, হে আল্লাহর রাসূল (ছাঃ)! এ সময় চন্দ্র-সূর্য দেখতে তোমাদের যে অসুবিধা হয় ক্বিয়ামতের দিন আল্লাহকে দেখতে এর চেয়ে বেশী কোন অসুবিধা হবে না।

আল্লাহ্ তা’আলা সম্পর্কে অজ্ঞতাবশত কথা বলা

আল্লাহ্ তা’আলা সম্পর্কে অজ্ঞতাবশত কথা বলা 

 রহমান রহীম আল্লাহ্‌ তায়ালার নামে-

মুলঃ শেইখ জামালউদ্দীন জারাবোজো | অনুবাদঃ মেরিনার
মুসলিম স্পেনের বিখ্যাত স্কলার ও তফসীরকার আল কুরতুবী, তাঁর তাফসীরে, যেসব লোক কুরআন পড়তে গিয়ে বলে ‘আমার মনে হয়’, ‘আমার মন বলে’ অথবা ‘আমার মতে’ সে সব লোক সম্পর্কে বলেন যে, তারা আসলে আল্লাহ সম্পর্কে না জেনে কথা বলে এবং এটা একটা অন্যতম বড় অপরাধ। এবং এরা প্রকৃতপক্ষে যিনদিক এবং [তাদের অপরাধের গুরুত্ব বোঝাতে] তিনি বলেন যে, এদের মুরতাদ হিসেবে হত্যা করা উচিত।
যখন কেউ কুরআনের আয়াত আবৃত্তি করে এবং যথাযথ পদ্ধতি অনুসরণ না করে এবং যথাযথ জ্ঞান ব্যতীত ঐ আয়াতের ব্যাখ্যা করে, সে হয়তো তার নিজের ‘হাওয়া’র অনুসরণ করে (হঠাৎ একটা কিছু মনে হল, ভাল মন্দ বিচার না করেই সেটার অনুসরণ করা), অথবা নিজের বাসনার বশবর্তী হয়, অথবা সে হয়তো শয়তানের দ্বারা পরিচালিত হয়, নয়তো সে নিজের অনুমানের উপর নির্ভর করে; যেটার (অনুমানের ভিত্তিতে কথা বলা) সম্পর্কে আল্লাহ তা’আলা কুরআনে বহুবার উল্লেখ করেছেন,
অথবা তার মনে প্রকৃতপক্ষে আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা’আলার পক্ষ থেকে ইলহাম হতে পারে, কিন্তু এই শেষোক্ত সম্ভাবনাটি অত্যন্ত ক্ষীণ। কেন? কেননা এক্ষেত্রে কুরআনের ব্যাখ্যা করার ক্ষেত্রে সঠিক পদ্ধতির অনুসরণ করা হয়নি, এবং যেহেতু সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিটি তাফসীরের যথার্থ পদ্ধতি অবলম্বন না করেই তাফসীর করেছে, অতএব সে ইতিমধ্যেই একটি অপরাধ করে ফেলেছে। যথার্থ জ্ঞান ব্যতীত কুরআন সম্পর্কে কথা বলে এবং সঠিক জ্ঞান, প্রশিক্ষণ এবং যোগ্যতা ছাড়াই এর ব্যাখ্যা দান করে, সে ইতিমধ্যেই একটি বড় অপরাধ করেছে, তাই এর সম্ভাবনা খুবই কম যে, আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা’আলা একটা ‘অপরাধের’ মধ্য দিয়ে তাকে অনুগ্রহ করবেন ও কুরআনের সঠিক ব্যাখ্যা তাকে শিক্ষাদান করবেন। যখন কেউ বলে যে, অমুক আয়াতে আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা‘আলা এটা বোঝাতে চেয়েছেন কিংবা ওটা বলতে চেয়েছেন, তখন সে প্রকৃতপক্ষে আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা‘আলার পক্ষে কথা বলছে এবং সে আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা‘আলা সম্পর্কে বলছে, আর তাই সেটা যদি সে প্রয়োজনীয় জ্ঞান ব্যতীত করে, তাহলে সে অত্যন্ত গর্হিত একটি কাজ করছে।
ইবনুল কায়্যিম এটাকে প্রকৃতপক্ষে ‘সবচেয়ে গুরুতর’ পাপকাজ বলে অভিহিত করেছেন, তিনি বলেছেন না জেনেই আল্লাহ সম্পর্কে কোন কথা বলা সবচেয়ে গুরুতর অপরাধ। এ সম্পর্কে কুরআনের উদ্ধৃতি : “বল, যেসব বস্তু আমার প্রতিপালক নিষেধ করেছেন তা হলো আল ফাওয়াহিশা (গুরুতর মন্দ কাজ, আইন বহির্ভূত যৌন সম্পর্ক) প্রকাশ্যে বা গোপনে ঘটিত, অপরাধ ও অত্যাচার, শিরক এবং আল্লাহ সম্পর্কে না জেনে কিছু বলা”। (কুর’আন, ৭: ৩৩)

ধর্ম মানেই ভয়??

ধর্ম মানেই ভয়?? 

                      রহমান রহীম আল্লাহ্‌ তায়ালার নামে- 

Add caption

 

আমরা অনেকে মনে করি ধর্ম মানেই হচ্ছে সবসময় আল্লাহ্‌র ﷻ ভয়ে ভয়ে থাকা, দোযখের ভয়াবহ শাস্তির কথা সবসময় মনে রেখে মুখ গোমড়া করে ভালো কাজ করে চলা। কোনো কারণে আমাদের অনেকের ভিতরে “ধর্ম মানেই ভয়”, এই ধারণাটি ঢুকে গেছে। আমাদের অনেকে তাদের ছেলে মেয়েদেরকে ছোট বেলা থেকেই ‘আল্লাহ’ নামের এক ভয়ংকর কোনো কিছুর ভয় দেখিয়ে বড় করি। বাচ্চারা আমাদের কথা না শুনলে, দুষ্টামি করলে, আল্লাহ্‌র ﷻ কথা বলে ভয় দেখাই। কোনো খারাপ কাজ করলে, আল্লাহর ﷻ শাস্তির ভয় দেখাই। একারণে তারা ছোটবেলা থেকে বড় হয় আল্লাহ্‌র ﷻ সম্পর্কে একটা নেগেটিভ ধারণা নিয়ে। তারা মনে করে আল্লাহ্‌ ﷻ মানেই হচ্ছে হেডমাস্টারদের মতো বদরাগী, কথায় কথায় শাস্তি দেয় এমন এক ভয়ংকর সত্ত্বা, যাকে আমাদের সারাজীবন ভয় করে চলতে হবে। একারনে তারা যখন বড় হয়ে ইসলাম মানার চেষ্টা করে, তখন সেই চেষ্টার মধ্যে না থাকে কোনো আন্তরিকতা, না থাকে কোনো ভালবাসা, থাকে শুধুই কিছু আনুষ্ঠানিকতা।

এই SMS/ ইমেইল পরিচিত দশ জনকে পাঠান, আপনার উন্নতি হবে, এগুলোর কোন ভিত্তি নেই!

এই SMS/ ইমেইল পরিচিত দশ জনকে পাঠান, আপনার উন্নতি হবে, এগুলোর কোন ভিত্তি নেই! 

                     

প্রথমত, প্রায়ই কিছু SMS এর কথা শুনতে পাই/দেখি যা সত্য/মিথ্যা মিশিয়ে প্রস্তুত করা হয় এরপর ৭/১০ জনকে পাঠতে বলা হয় আর এটাও বলা হয় যে এতে কিছুদিনের কিংবা দুইদিনের মধ্যে সে সুসংবাদ শুনবে কিংবা তার উন্নতি হবে। দ্বীন সম্পর্কে পরিস্কার ধারণা না থাকার কারণে অনেকে আবেগ প্রবন হয়ে সরল বিশ্বাসে SMS গুলো পাঠিয়ে থাকেন।
দ্বিতীয়ত, প্রায়ই জুমা’র সালাত পড়ে বের হতে না হতেই হাতে নানান প্রকারের কাগজ এসে পড়ে। এরমধ্যে অমুক ব্যক্তি মদীনা শরীফ হতে স্বপ্ন দেখেছেন…..এরপর সেখানে কিছু কল্পনা প্রসূত আমল করার কথা লেখা থাকে এরপর বলা হয় ১০০ জনকে তা ফটোকপি করে দিলে উন্নতি হবে আর অবিশ্বাস করলে নানা ধরণের বিপদ হবে লেখা থাকে। সরল বিশ্বাসে অনেকেই এই কাজটি করে থাকেন কল্যাণ লাভের আশায়।
এক কথায় এগুলোর কোন ভিত্তি নেই। আমাদের জীবনে কল্যাণ কিংবা অকল্যাণ কিছু ভুয়া/বানোয়াট SMS আর চিঠি ফটোকপি করে বিলি করার সাথে বিন্দু মাত্র সম্পৃক্ত নয়। বরং এগুলোতে বিশ্বাস করলে নিম্নোক্ত ভয়ংকর বিষয়গুলো সাব্যস্ত করা হয়ে থাকে যা স্পষ্টত কুফরি।
১. ভাগ্য গণনায় বিশ্বাস স্থাপন করা হয়, যা স্পষ্টত কুফরি। SMS আর চিঠি অন্যকে ছড়িয়ে দেয়ার ফলে ভাগ্যের উন্নতি হবে না দিলে খারাপ হবে এরকম নিশ্চিত জ্ঞান সেই ব্যক্তিকে কে দিয়েছে?
আল্লাহ তা’আলা স্পষ্ট করে বলে দিয়েছেন-
وَعِنْدَهُ مَفَاتِحُ الْغَيْبِ لا يَعْلَمُهَا إِلا هُوَ
অর্থঃ “আর তাঁর কাছে রয়েছে গায়েবের চাবিসমূহ, তিনি ছাড়া এ বিষয়ে কেউ জানে না।” (সূরা আনআমঃ ৫৯)
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামও এমন স্পষ্ট করে ভবিষ্যতের তথ্য ওহী ব্যতীত জানতেন না। কুরআনের বর্ণিত হয়েছে-
قُلْ لا أَمْلِكُ لِنَفْسِي نَفْعًا وَلا ضَرًّا إِلا مَا شَاءَ اللَّهُ وَلَوْ كُنْتُ أَعْلَمُ الْغَيْبَ لاسْتَكْثَرْتُ مِنَ الْخَيْرِ وَمَا مَسَّنِيَ السُّوءُ إِنْ أَنَا إِلا نَذِيرٌ وَبَشِيرٌ لِقَوْمٍ يُؤْمِنُونَ
অর্থঃ বল, ‘আমি আমার নিজের কোন উপকার ও ক্ষতির ক্ষমতা রাখি না, তবে আল্লাহ যা চান। আর আমি যদি গায়েব জানতাম তাহলে অধিক কল্যাণ লাভ করতাম এবং আমাকে কোন ক্ষতি স্পর্শ করত না। আমিতো একজন সতর্ককারী ও সুসংবাদদাতা এমন কওমের জন্য, যারা বিশ্বাস করে’। (সূরা আরাফঃ ১৮৮)
২. ইসলাম রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের জীবদ্দশাতেই পরিপূর্ণ ঘোষণা করা হয়েছে। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের বিদায় হজ্জের ভাষণের পরে নিম্নোক্ত আয়াতটি নাযিল হয়-
الْيَوْمَ أَكْمَلْتُ لَكُمْ دِينَكُمْ وَأَتْمَمْتُ عَلَيْكُمْ نِعْمَتِي وَرَضِيتُ لَكُمُ الإسْلامَ دِينًا
অর্থঃ “আজ আমি তোমাদের জন্য তোমাদের দীনকে পূর্ণ করলাম এবং তোমাদের উপর আমার নিআমত সম্পূর্ণ করলাম এবং তোমাদের জন্য দীন হিসেবে পছন্দ

ইসলাম মেনে চলা কি খুব ঝামেলার?

ইসলাম মেনে চলা কি খুব ঝামেলার? 

 

রহমান রহীম আল্লাহ্‌ তায়ালার নামে-

লিখেছেন: ডঃ আবুল কালাম আজাদ
 
আমি ইসলাম নিয়ে ব্যক্তিগত ও প্রাতিষ্ঠানিকভাবে পড়াশুনা করেছি এবং এখনো করি। এসব কিছু পড়ে এবং পালন করে বুঝেছি যে, ইসলাম একটি ঝামেলাহীন বা ঝামেলামুক্ত জীবন-পথ।
আল্লাহ পাক নিজেই ঘোষনা করেছেনঃ
وَمَا جَعَلَ عَلَيْكُمْ فِي الدِّينِ مِنْ حَرَجٍ
এবং তিনি দ্বীনের ব্যাপারে তোমাদের ওপর কোন সংকীর্নতা ঝামেলা বানাননি (সূরা আল-হাজ্জঃ ৭৮)

সূরা মায়েদার ৬ নং আয়াতে আল্লাহ অজুর বিবরণ দেওয়ার শেষের দিকে বলেছেনঃ
مَا يُرِيدُ اللَّـهُ لِيَجْعَلَ عَلَيْكُم مِّنْ حَرَجٍ
মানে হলো- আল্লাহ তোমাদের ওপর ঝামেলা চাপাতে চান না।
আসলেই তাই।

ঈমান বিধ্বংসী দশটি কারণ

ঈমান বিধ্বংসী দশটি কারণ 

ভূমিকা


আল্লাহ তা‘আলা তাঁর বান্দাদেরকে ইসলামের সুশীতল ছায়াতলে আশ্রয় নেওয়ার এবং একে আকড়ে ধরার নির্দেশ দিয়েছেন। যাতে কেউ এমন কাজ না করে, যা তাকে ইসলাম থেকে খারিজ করে দেয়। এ ব্যাপারে দাওয়াত দেওয়ার জন্যই আল্লাহ তা‘আলা অসংখ্য নবী-রাসূল প্রেরণ করেছেন। আল্লাহ তা‘আলা বলেন, وَلَقَدْ بَعَثْنَا فِيْ كُلِّ أُمَّةٍ رَسُولاً أَنِ اعْبُدُوْا اللهَ وَاجْتَنِبُوْا الطَّاغُوْتَ فَمِنْهُمْ مَنْ هَدَى اللهُ وَمِنْهُمْ مَنْ حَقَّتْ عَلَيْهِ الضَّلاَلَةُ- ‘আমি প্রত্যেক উম্মতের মধ্যেই রাসূল প্রেরণ করেছি এই মর্মে যে, তোমরা আল্লাহর ইবাদত কর এবং ত্বাগূত[1] কে পরিহার কর। অতঃপর তাদের মধ্যে কিছুসংখ্যককে আল্লাহ হেদায়াত করেছেন এবং কিছু সংখ্যকের জন্য বিপথগামিতা অবধারিত হয়ে গেল’ (নাহল ৩৬)। সুতরাং যারা নবীদের অনুসরণ করবে তারা সৎপথ পাবে। আর যারা তাঁদের অনুসরণ করবে না কিংবা অবাধ্যতা বা বিরোধিতা করবে তারা পথভ্রষ্টতায় নিপতিত হবে। এছাড়াও এমন কিছু কাজ-কর্ম রয়েছে, যা মুসলমানের ঈমান ধ্বংস করে দেয়, তাকে ‘মুরতাদে’ পরিণত করে তথা ইসলাম থেকে খারিজ করে দেয়। মুরতাদ হওয়ার ভয়াবহতা সম্পর্কে কুরআনুল কারীমে ও ছহীহ হাদীছ সমূহে অসংখ্য সাবধান বাণী পরিলক্ষিত হয়। মুরতাদ তথা ধর্মত্যাগীদের ব্যাপারে ওলামায়ে কেরাম একমত যে, এটা হত্যাযোগ্য অপরাধ এবং তার মাল-সম্পদ ছিনিয়ে নেওয়া ইসলামী রাষ্ট্রের শাসকের জন্য বৈধ।

ইসলাম থেকে খারিজ হওয়ার বা ঈমান বিনষ্ট হওয়ার কারণ অনেক। তন্মধ্যে দশটি কারণ নিম্নে উল্লেখ করা হ’ল

আল্লাহ সর্বশক্তিমান

আল্লাহ সর্বশক্তিমান 

 

এ পৃথিবীতে মানুষ পার্থিব জগতের উন্নয়নে বড় বড় বিষয়ে চিন্তা-গবেষণা করে অনেক বড় পরিকল্পনা গ্রহণ করেছেন বা করছেন। আল্লাহর শক্তির (বিকল্প) অন্তর্ভুক্ত প্রাকৃতিক শক্তি নিয়েও ব্যাপক গবেষণা চলছে বিভিন্ন দেশে বিজ্ঞানীদের মাঝে। বিশ্বের বিজ্ঞানীদের দৃষ্টি এখন নতুন নতুন আবিষ্কারের  দিকে। এসব আবিষ্কারে মানুষ আর আশ্চর্যবোধ করে না। মনে হয় এগুলো যেন একটা চিরাচরিত ব্যাপার বা মানুষের জ্ঞান-বুদ্ধি, চিন্তা-বিবেচনা ও গবেষণার সুফল। কিন্তু এগুলোর গুরুত্ব, মাহাত্ম্য ও আধ্যাত্মিক অর্থ কি তাই? একটি সামান্য মোবাইল সেটের কার্যকারিতা বা ক্ষমতা নিয়ে আমরা চিন্তা করেছি কি? কম্পিউটার সারাবিশ্বে আজ প্রায় ঘরে ঘরে পৌঁছে যাচ্ছে। কিন্তু এর সীমারেখা বা কার্যক্ষমতা কত ব্যাপক! অথচ এগুলো এখন সহজ ব্যবহার্য বস্ত্ত হয়ে পড়েছে। কারণ আজকাল পাঁচ-সাত বছর বয়সের একটা বুদ্ধিমান শিশুও মোবাইলের ব্যবহার সম্বন্ধে ওয়াকেফহাল। কম্পিউটার ও ভিডিও চিত্রের অদ্ভূত নৈপূণ্য সম্পর্কেও তারা অনেক অবগত, যা ষাট-সত্তর বছর বয়সের বৃদ্ধরাও বুঝে না। শুধু এগুলোই নয়, আরও অসংখ্য বিষয়ে মানুষ সর্বশক্তিমান আল্লাহর শক্তির ও জ্ঞানের দিকে অগ্রসর হচ্ছে।

বিশ্বনবীর লাশ চুরি ও ইহুদী চক্রান্ত

বিশ্বনবীর লাশ চুরি ও ইহুদী চক্রান্ত

হিজরী ৫৫৭ সালের একরাতের ঘটনা।
সুলতান নূরুদ্দীন জাঙ্কি (র:) তাহাজ্জুদ ও দীর্ঘ মুনাজাতের পর ঘুমিয়ে পড়েছেন। চারিদিক নিরব নিস্তব্দ। কোথাও কোন সাড়া-শব্দ নেই। এমতাবস্থায় হঠাৎ তিনি স্বপ্নে দেখলেন স্বয়ং রাসুল (স) তার কামরায় উপস্থিত। তিনি কোন ভূমিকা ছাড়াই দু’জন নীল চক্ষু বিশিষ্ট লোকের দিকে ইঙ্গিত করে বললেন, (নূরুদ্দীন) মাহমূদ! (এরা আমাকে বিরক্ত করছে), এ দুজন থেকে আমাকে মুক্ত কর।
এই ভয়াবহ স্বপ্ন দেখে নূরুদ্দীন জাঙ্কি (র:) অত্যন্ত ভীত সন্ত্রস্ত হয়ে ঘুম থেকে জাগ্রত হলেন এবং কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়ে গোটা কক্ষময় পায়চারি করতে লাগলেন। সাথে সাথে তার মাথায় বিভিন্ন প্রকার চিন্তা ঘুরপাক খেতে লাগল। হৃদয় রাজ্যে ভীড় জমাল হাজারও রকমের প্রশ্ন। তিনি ভাবলেন-
আল্লাহর রাসূল তো এখন কবরে জীবনে!
তার সাথে অভিশপ্ত ইহুদীরা এমন কী ষড়যন্ত্র করতে পারে?
কী হতে পারে তাদের চক্রান্তের স্বরুপ?
তারা কি রাসূল (স)-এর কোন ক্ষতি করতে চায়?
চায় কি পর জীবনেও তার সাথে ষড়যন্ত্র লিপ্ত হতে?
আমাকে দু’জন ইহুদীর চেহারা দেখানো হল কেন?
শয়তান তো আল্লাহর নবীর অবয়বে আসতে পারে না। তাহলে কি আমি সত্য স্বপ্ন দেখেছি?
এসব ভাবতে ভাবতে সুলতান অস্থির হয়ে পড়লেন। তিনি অজু-গোসল সেরে তাড়াতাড়ি দু’রাকাত নামায আদায় করলেন। তারপর মহান আল্লাহর দরবারে ক্রন্দনরত অবস্থায় অনেকক্ষণ মুনাজাত করলেন।
সুলতানের এমন কেউ ছিল না যার সাথে তিনি পরামর্শ করবেন। আবার এ স্বপ্নও এমন নয় যে, যার তার কাছে ব্যক্ত করবেন। অবশেষে আবারও তিনি শয়ন করলেন। দীর্ঘ সময় পর যখনই তার একটু ঘুমের ভাব এলো, সঙ্গে সঙ্গে এবারও তিনি প্রথম বারের ন্যায় নবী করীম (সা)কে স্বপ্নে দেখলেন। তিনি তাকে পূর্বের ন্যায় বলছেন,
(নূরুদ্দীন) মাহমূদ! এ দুজন থেকে আমাকে মুক্ত কর।
এবার নূরুদ্দীন জাঙ্কি (র:) “আল্লাহ্, আল্লাহ্” বলতে বলতে বিছানা থেকে উঠে বসলেন। তারপর কোথায় যাবেন, কী করবেন কিছুই ঠিক করতে পা পেরে দ্রুত অজু-গোসল শেষ করে মুসল্লায় দাড়িয়ে অত্যধিক ভীত সন্ত্রস্ত অবস্থায় দু’রাকাত নামায আদায় করলেন এবং দীর্ঘ সময় অশ্রু সিক্ত নয়নে দোয়া করলেন।
রাতের অনেক অংশ এখনও বাকী। সমগ্র পৃথিবী যেন কি এক বিপদের সম্মুখীন হয়ে নিঝুম হয়ে আছে। কী এক মহা বিপর্যয় যেন পৃথিবীর বুকে সংঘটিত হতে যাচ্ছে । কঠিন বিপদের ঘনঘটা যেন চতুর্দিকে ছড়িয়ে পড়ছে। তিনি মুখ তুলে আকাশ পানে তাকালেন। মনে হলো স্বপ্ন দেখা ঐ দু’জন লোক যেন তাকে ধরার জন্য দ্রুতগতিতে ধেয়ে আসছে। তিনি সেই চেহারা দুটোকে মনের মনিকোষ্ঠা থেকে সরাবার চেষ্টা করলেন। কিন্তু কিছুতেই তা সম্ভব হল না। শেষ পর্যন্তু নিরুপায় হয়ে নূরুদ্দীন জাঙ্কি (র:) চোখ বন্ধ করে আবারও তন্দ্রা-বিভোর হয়ে শুয়ে পড়লেন।
শোয়ার পর তৃতীয়বারও তিনি একই ধরনের স্বপ্ন দেখলেন।
রাসূল (সা)-এর বক্তব্য শেষ হওয়ার পর নূরুদ্দীন জাঙ্কি (র:) ক্রন্দনরত অবস্থায় বিছানা পরিত্যাগ করলেন। এবার তার দৃঢ় বিশ্বাস জন্মাল যে, নিশ্চয়ই প্রিয়নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের রওজা মোবারক কোন না মহাবিপদের সম্মুখীন হয়েছে।
তিনি তড়িৎ গতিতে অজু-গোসল করে ফজরের নামায আদায় করলেন। নামায শেষে প্রধানমন্ত্রী জালালুদ্দীন মৌশুলীর নিকট গিয়ে গোপনীয়তা রক্ষার প্রতিশ্রুতি নিয়ে স্বপ্নের বিবরণ শুনালেন এবং এ মুহূর্তে কী করা যায়, এ ব্যাপারে সুচিন্তিত পরামর্শ চাইলেন।
জালালুদ্দীন মৌশুলী স্বপ্নের বৃত্তান্ত অবগত হয়ে বললে, “হুজুর! আপনি এখনও বসে আছেন? নিশ্চয়ই প্রিয় নবীর রওজা মোবারক কোন কঠিন বিপদের সম্মুখীন হয়েছে। তাই এ বিপদ থেকে উদ্ধার করার জন্য বারবার তিনি আপনাকে স্মরণ করছেন। অতএব, আমার পরামর্শ হল, সময় নষ্ট না করে অতিসত্তর মদীনার পথে অগ্রসর হোন।”
নূরুদ্দীন জাঙ্কি (র:) আর কালবিলম্ব করলেন না। তিনি ষোল হাজার দ্রুতগামী অশ্রারোহী সৈন্য এবং বিপুল ধন সম্পদ নিয়ে বাগদাদ থেকে মদিনা অভিমুখে রওয়ানা হলেন। রাত দিন সফর করে ১৭তম দিনে মদিনা শরীফে পৌঁছলেন এবং সৈন্য বাহিনীসহ গোছল ও অজু সেরে দু’ রাকাত নফল নামাজান্তে দীর্ঘ সময় ধরে মোনাজাত করলেন। তারপর সৈন্য বাহিনী দ্বারা মদিনা ঘেরাও করে ফেললেন এবং সঙ্গে সঙ্গে আদেশ জারী করে দিলেন যে, বাইরের লোক মদিনায় আসতে পারবে, কিন্তু সাবধান! মদিনা থেকে কোন লোক বাইরে যেতে পারবে না।
নূরুদ্দীন জাঙ্কি (র:) জুম্মার খোৎবা দান করলেন এবং ঘোষণা দিলেন, “আমি মদিনাবাসীকে দাওয়াত দিয়ে এক বেলা খানা খাওয়াতে চাই। আমার অভিলাষ, সকলেই যেন এই দাওয়াতে অংশ গ্রহণ করে।”
সুলতান মদিনাবাসীকে আপ্যায়নের জন্য বিশাল আয়োজন করলেন এবং প্রত্যেকের নিকট অনুরোধ করলেন, মদিনার কোন লোক যেন এই দাওয়াত থেকে বঞ্চিত না হয়।
নির্ধারিত সময়ে খাওয়া-দাওয়া শুরু হল। প্রত্যেকেই তৃপ্তিসহকারে খানা খেল। যারা দুরদুরান্ত থেকে আসতে পারেনি তাদেরকেও শেষ পর্যন্ত ঘোড়া ও গাধার পিঠে চড়িয়ে আনা হল। এভাবে প্রায় পনের দিন পর্যন্ত অগণিথ লোক শাহী দাওয়াতে শরিক হওয়ার পর সুলতান জিজ্ঞাসা করলেন আরও কেউ অবশিষ্ট আছে কি? থাকলে তাদেরকেও ডেকে আন।
এই নির্দেশের পর সুলতান বিশ্বস্ত সূত্রে অবগত হলেন যে, আর কোন লোক দাওয়াতে আসতে বাকী নেই। একথা শুনে তিনি সীমাহীন অস্থির হয়ে পড়লেন। চিন্তার অথৈই সাগরে হারিয়ে গেলেন তিনি। ভাবলেন, যদি আর কোন লোক দাওয়াতে শরীক হতে বাকী না থাকে তাহলে সেই অভিশপ্ত লোক দু’জন গেল কোথায়? আমি তো দাওয়াতে শরীক হওয়া প্রতিটি লোককেই অত্যন্ত গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করেছি। কিন্তু কারও চেহারাইতো স্বপ্নে দেখা লোক দুটোর চেহারার সাথে মিলল না, তাহলে কি আমার মিশন ব্যর্থ হবে? আমি কি ঐ কুচক্রী লোক দুটোকে গ্রেফতার করে দৃষ্টান্তমুলক শাস্তি দিতে সক্ষম হব না? এসব চিন্তায় বেশ কিছুক্ষণ তিনি ডুবে রইলেন। তারপর আবারও তিনি নতুন করে ঘোষণা করলেন, আমার দৃঢ় বিশ্বাস, মদিনার সকল লোকদের দাওয়াত খাওয়া এখনও শেষ হয়নি। অতএব সবাইকে আবারও অনুরোধ করা যাচ্ছে, যারা এখনও আসেনি তাদেরকে যেন অনুসন্ধান করে দাওয়াতে শরীক করা হয়।
একথা শ্রবণে মদিনাবাসী সকলেই এক বাক্যে বলে উঠল, “হুজুর! মদিনার আশে পাশে এমন কোন লোক বাকী নেই, যারা আপনার দাওয়াতে অংশ গ্রহণ করেনি।” তখন নূরুদ্দীন জাঙ্কি (র:) বলিষ্ঠ কন্ঠে বললেন, “আমি যা বলেছি, ঠিকই বলেছি। আপনারা ভাল ভাবে অনুসন্ধান করুন।”
সুলতানের এই দৃঢ়তা দেখে লক্ষাধিক জনতার মধ্য থেকে এক ব্যক্তি হঠাৎ করে বলে উঠল, “হুজুর! আমার জানামতে দু’জন লোক সম্ভবত এখনও বাকী আছে। তারা আল্লাহ্‌ওয়ালা বুযুর্গ মানুষ। জীবনে কখনও কারও কাছ থেকে হাদীয়া তোহফা গ্রহণ করেন না, এমনকি কারও দাওয়াতেও শরীক হন না। তারা নিজেরাই লোকদেরকে অনেক দান-খয়রাত করে থাকেন। নীরবতাই অধিক পছন্দ করেন। লোক সমাজে উপস্থিত হওয়া মোটেও ভালবাসেন না।”
লোকটির বক্তব্য শুনে সুলতানের চেহারায় একটি বিদ্যুত চমক খেলে গেল। তিনি কাল বিলম্ব না করে কয়েকজন লোক সহকারে ঐ লোক দুটোর আবাসস্থলে উপস্থিত হলেন। তিনি দেখলেন, এতো সেই দু’জন, যাদেরকে স্বপ্নে দেখানো হয়েছিল। তাদেরকে দেখে সুলতানের দু’চোখ রক্তবর্ণ ধারণ করল। তিনি জিজ্ঞাসা করলেন, “কে তোমরা? কোথা থেকে এসেছ? তোমরা সুলতানের দাওয়াতে শরীক হলে না কেন?”
লোক দুটো নিজের পরিচয় গোপন করে বলল, “আমরা মুসাফির। হজ্বের উদ্দেশ্য এসেছিলাম। হজ্ব কার্য সমাধা করে জিয়ারতের নিয়তে রওজা শরীকে এসেছি। কিন্তু প্রিয় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের প্রেমে আত্মহারা হয়ে ফিরে যেতে মনে চাইল না। তাই বাকী জীবন রওজার পাশে কাটিয়ে দেওয়ার নিয়তেই এখানে রয়ে গেছি। আমরা কারও দাওয়াত গ্রহণ করি না। এক আল্লাহর উপরই আমাদের পূর্ণ আস্থা। আমরা তারই উপর নির্ভরশীল। এবাদত, রিয়াজত ও পরকালের চিন্তায় বিভোর থাকাই আমাদের কাজ। কুরআন পাক তিলাওয়াত, নফল নামায ও অজিফা পাঠেই আমাদের সময় শেষ হয়ে যায়। সুতরাং দাওয়াত খাওয়ার সময়টা কোথায়?”
উপস্থিত জনগণ তাদের পক্ষ হয়ে বলল যে, “হুজুর! এরা দীর্ঘদিন যাবত এখানে অবস্থান করছে। এদের মত ভাল লোক আর হয় না। সব সময় দরিদ্র, এতিম ও অসহায় লোকদের প্রচুর পরিমাণে সাহায্য করে। তাদের দানের উপর অত্র লোকদের প্রচুর পরিমাণে জীবিকা নির্ভর করে।”
নূরুদ্দীন জাঙ্কি (র:) লোকদের কথা শুনে লোক দুটোর প্রতি পুনরায় গভীর দৃষ্টিতে তাকালেন। অত্যন্ত সুক্ষ্মভাবে তাদের পা থেকে মাথা পর্যন্ত পর্যবেক্ষণ করলেন। এতে আবারও তিনি নিশ্চিত হলেন, এরা তারাই যাদেরকে তিনি স্বপ্নে দেখেছিলেন।
এবার সুলতান জলদ গম্ভীর স্বরে তাদেরকে বললেন, “সত্য কথা বল। তোমরা কে? কেন, কী উদ্দেশ্যে এখানে থাকছ?”
এবারও তারা পূর্বের কথা পুনরাবৃত্তি করে বলল, “আমরা পশ্চিম দেশ থেকে পবিত্র হজ্বব্রত পালনের জন্য এখানে এসেছি। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নৈকট্য লাভই আমাদের একমাত্র লক্ষ্য। এ উদ্দেশ্যেই আমরা এখানে অবস্থান করছি।”
সুলতান এবার কারও কথায় কান না দিয়ে তাদেরকে সেখানে আটক রাখার নির্দেশ দিলেন, অত:পর স্বয়ং তাদের থাকার জায়গায় গিয়ে খুব ভাল করে অনুসন্ধাণ চালালেন। সেখানে অনেক মাল সম্পদ পাওয়া গেল। পাওয়া গেল বহু দুর্লভ কিতাবপত্র। কিন্তু এমন কোন জিনিষ পাওয়া গেল না, যদ্বারা স্বপ্নের বিষয়ে কোন প্রকার সহায়তা হয়।
নূরুদ্দীন জাঙ্কি(র:) অত্যধিক পেরেশান, অস্থির। এখনও রহস্য উদঘাটন করতে না পারায় তিনি সীমাহীন চিন্তিত। এদিকে মদীনায় বহু লোক তাদের জন্য সুপারিশ করছে। তারা আবারও বলছে, “হুজুর! এরা নেককার বুযুর্গ লোক। দিনভর রোজা রাখেন। রাতের অধিকাংশ সময় ইবাদত বন্দেগীতে কাটিয়ে দেন। পাঁচ ওয়াক্ত নামাযই রওজা শরীফের নিকটে এসি আদায় করেন। প্রতিদিন নিয়মিত জান্নাতুল বাকী যিয়ারত করতে যান। প্রতি শনিবার মসজিদুল কোবাতে গমন করেন। কেউ কিছু চাইলে খালি হাতে ফিরিয়ে দেন না।”
সুলতান তাদের অবস্থা শুনে সীমাহীন আশ্চর্যবোধ করলেন। তথাপি তিনি হাল ছাড়ছেন না। কক্ষের অংশে অনুসন্ধানী দৃষ্টি ফিরিয়ে যাচ্ছেন। ঘরের প্রতিটি বস্তুকে গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করছেন। কিন্তু সন্দেহ করার মত কিছুই তিনি পাচ্ছেন না।
নূরুদ্দীন জাঙ্কি (র:) এক পর্যায়ে সঙ্গীদের বললেন- “আচ্ছা, তাদের নামাযের মুসাল্লাটা একটু উঠাও দেখি।” সঙ্গীরা নির্দেশ পালন করল। নামাযের মুসল্লাটি বিছানো ছিল একটি চাটাইয়ের উপর। সুলতান আবার নির্দেশ দিলেন, “চাটাইটিও সরিয়ে ফেল।”
চাটাই সরানোর পর দেখা গেল একখানা বিশাল পাথর। সুলতারেন নির্দেশে তাও সরানো হল। এবার পাওয়া গেল এমন একটি সুরঙ্গপথ যা বহুদূর পর্যন্ত চলে গেছে। এমনকি তা পৌছে গেছে, রওজা শরীফের অতি সন্নিকটে।
এ দৃশ্য অবলোকন করা মাত্র নূরুদ্দীন জাঙ্কি (র:) বিজলী আহতের ন্যায় চমকে উঠলেন। অস্থিরতার কালো মেঘ ছেয়ে যায় তার সমস্ত হৃদয় আকাশে। ক্রোধে লাল হয়ে যায় গোটা মুখমন্ডল। অবশেষে লোক দুটোকে লক্ষ্য করে ক্ষিপ্ত-ক্রদ্ধ সিংহের ন্যায় গর্জন করে ঝাঁঝাঁলো কন্ঠে বললেন-
“তোমরা পরিস্কার ভাষায় সত্যি কথাটা খুলে বল, নইলে এক্ষুনি তোমাদের যন্ত্রণাদায়ক শাস্তির সম্মুক্ষিন হতে হবে। বল, তোমরা কে? তোমাদরে আসল পরিচয় কী? কারা, কী উদ্দেশ্যে তোমাদেরকে এখানে পাঠিয়েছে?”
সুলতানের কথায় তারা ঘাবড়ে গেল। কঠিন বিপদ সামনে দেখে আসল পরিচয় প্রকাশ করে বলল,-
“আমরা ইহুদী। দীর্ঘদিন যাবত আমাদেরকে মুসল শহরের ইহুদীরা সুদক্ষ কর্মী দ্বারা প্রশিক্ষণ দিয়ে প্রচুর অর্থ সহকারে এখানে পাঠিয়েছে। আমাদেরকে এজন্য পাঠানো হয়েছে যে, আমরা যেন কোন উপায়ে মুহাম্মদ (স)-এর শবদেহ বের করে ইউরোপীয় ইহুদীদের হাতে হস্তান্তর করি। এই দুরূহ কাজে সফল হলে তারা আমাদেরকে আরও ধনসম্পদ দিবে বলে প্রতিশ্রুতি দিয়েছে।
সুলতান বললেন, “তোমরা তোমাদের পরিকল্পনা বাস্তবায়নের জন্য কী পদ্ধতি অবলম্বন করেছিলে? কিভাবে তোমরা কাজ করতে?”
তারা বলল, “আমাদের নিয়মিত কাজ ছিল, রাত গভীর হলে অল্প পরিমাণ সুড়ঙ্গ খনন করা এবং সাথে ঐ মাটিগুলো চামড়ার মজকে ভর্তি করে অতি সন্তর্পণে মদীনার বাইরে নিয়ে ফেলে আসা। আজ দীর্ঘ তিন বৎসর যাবত এ মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়নের কাজে আমরা অনবরত ব্যস্ত আছি। যে সময় আমরা রওজা মোবারকের নিকট পৌছে গেলাম এবং সিদ্ধান্ত গ্রহণ করলাম যে, এক সপ্তাহের মধ্যে বিশ্বনবীর লাশ বের করে নিয়ে যাব, ঠিক সে সময় ধরে আমাদের মনে হল, আকাশ যেন ভেঙ্গে টুকরো টুকরো হয়ে যাচ্ছে। জমীন যেন প্রচন্ড ভূমিকম্পে থরথর করে কাঁপছে। যেন সমগ্র পৃথিবী জুড়ে মহাপ্রলয় সংঘটিত হচ্ছে। অবস্থা এতাটাই শোচনীয় রূপ ধারণ করল, মনে হল সুড়ঙ্গের ভিতরেই যেন আমরা সমাধিস্থ হয়ে পড়ব। এ অবস্থা প্রত্যক্ষ করে ভীত সন্ত্রস্থ হয়ে আমরা কাজ বন্ধ করে রেখেছি।”
তাদের বক্তব্যে সুলতানের নিকট সব কিছুই পরিস্কার হয়ে গেল। তাই তিনি লোক দুটোকে নযীর বিহীন শাস্তি দেয়ার ব্যবস্থা গ্রহণ করলেন । যাতে ভবিষ্যতে কেউ আর এমন দু:সাহস দেখাতে না পারে।
তিনি মসজিদ হতে অর্ধ মাইল দূরে একটি বিশাল ময়দানে বিশ তাহ উঁচু একটি কাঠের মঞ্চ তৈরী করলেন। সাথে সাথে সংবাদ পাঠিয়ে মদীনা ও মদীনার আশেপাশের লোকদেরকে উক্ত ময়দানে হাজির হওয়ার নির্দেশ প্রদান করলেন।
নির্ধারিত সময়ে লক্ষ লক্ষ লোক উক্ত মাঠে সমবেত হল। সুলতান নূরুদ্দীন জাঙ্কি (র:) অপরাধী লোক দুটোকে লৌহ শিকলে আবদ্ধ করে মঞ্চের উপর বসালেন । তারপর বিশাল জনসমুদ্রের মাঝে তাদের হীন চক্রান্ত ও ঘৃণ্য তৎপরতার কথা উল্লেখ করলেন।
সুলতান নূরুদ্দীন জাঙ্কি (র:) -এর বক্তব্য শ্রবণ করে লোকজন বিস্ময়ে হতবাক হয়ে গেল। তারা এ ঘৃণ্য ষড়যন্ত্রের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবী করল। সুলতান বললেন- হ্যাঁ, এদের শাস্তি দৃষ্টান্তমূলকই হবে।
তিনি লোকদেরকে বিপুল পরিমাণ লাকড়ী সংগ্রহের নির্দেশ দিলেন। তারপর লক্ষ জনতার সামনে সেই ইহুদী দুটোকে মঞ্চের নিম্নভাগে আগুন লাগিয়ে পুড়ে ভস্ম করে ফেলেন। কোন কোন বর্ণনায় আছে, সেই আগুন নাকি দীর্ঘ এগার দিন পর্যন্ত জ্বলছিল।
অত:পর তিনি বিপুল পরিমাণ অর্থ ব্যয় করে এক হাজার মন সিসা গলিয়ে রওজা শরীফের চতুষ্পার্শে মজবুত প্রাচীর নির্মাণ করে দেন। যেন ভবিষ্যতে আর কেউ প্রিয় নবীজির কবর পর্যন্ত পৌছাতে সক্ষম না হয়। তারপর তিনি কায়মনোবাক্যে আল্লাহ্‌পাকের শুকরিয়া আদায় করলেন এবং তাকে যে এত বড় খেদমতের জন্য কবুল করা হল সেজন্য সপ্তাহকাল ব্যাপী আনন্দাশ্রু বিসর্জন দিলেন। ইতিহাসের পাতা থেকে অবগত হওয়া যায় যে, নূরুদ্দীন জাঙ্কি (র:) ইন্তিকাল করলে অসীয়ত মোতাবেক তার লাশকে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের রওজা মোবারকের অতি নিকটে দাফন করা হয়।
ইসলামঃ আপনার জিজ্ঞাসার জবাব
বিশ্বনবীর লাশ চুরি ও ইহুদী চক্রান্ত” লেখক: জিল্লুর রহমান নাদভী । আল এছহাক প্রকাশনী।
এছাড়াও এই ঘটনাটা পাবেনঃ “রওজা শরীফের ইতিকথা”–মুহিউদ্দিন খান(সম্পাদক, মাসিক মদীনা),
মা’আলেমে দারুল হিজরা, পৃঃ১৪৬, জযবুল কুলুব

 

বিপদে পড়লে মহানবী (সা:) এই ৩টি দোয়া পাঠ করতে বলেছেন :

বিপদে পড়লে মহানবী (সা:) এই ৩টি দোয়া পাঠ করতে বলেছেন :

আমাদের প্রিয় নবী হযরত মুহাম্মদ (সা.) মহান আল্লাহর দীন প্রতিষ্ঠাকালে বহু বিপদের সম্মুখীন হয়েছেন। বেশ কয়েকবার কাফেরদের বিরুদ্ধে লড়াই করতে হয়েছে। অনেক জুলুম, অন্যায়, অত্যাচার পাড়ি দিয়ে তিনি ইসলাম প্রতিষ্ঠা করেছেন। বিপদের সময় মহানবী (সা.) যে ৩টি দোয়া পাঠ করতেন সেই দোয়াগুলো উম্মতদেরও পাঠ করাতে বলেছেন।
দোয়া ৩টি হলো-
১। সাদ ইবনে আবি ওক্কাস (রা.) বলেন, নবীজি (সা.) দুঃখ-কষ্টের সময় বলতেন :
“লা-ইলাহা ইল্লা আনতা সুবহানাকা ইন্নি কুনতু মিনাজ জোয়ালিমিন।” (দোয়া ইউনূস)
অর্থ : একমাত্র তুমি ছাড়া কোনো মাবুদ নেই। তোমার পবিত্রতা বর্ণনা করছি। নিশ্চয়ই আমি সীমালঙ্ঘনকারী। (তিরমিজি : ৩৫০০)
২। আসমা বিনতে ওমাইর (রা.) থেকে বর্ণিত, নবীজি (সা.) বলেন, আমি কি তোমাদের এমন কিছু শিখিয়ে দেব না যা তুমি দুশ্চিন্তা ও পেরেশানির মধ্যে পড়বে। সাহাবী বললেন, অবশ্যই শেখাবেন।
নবীজি (সা.) বললেন, দোয়াটি হচ্ছে :
“আল্লাহু আল্লাহ রব্বী লা উশরিকু বিহি শাইয়ান।”
অর্থ : আল্লাহই আল্লাহ আমার প্রতিপালক। আমি তার সঙ্গে কোনো কিছু শরিক করি না। (আবু দাউদ : ১৫২৫)
৩। আনাস (রা.) থেকে বর্ণিত, নবীজি (সা.) বলেন :
“আল্লাহুম্মা লা সাহলা ইল্লা মা জায়ালতাহু সাহলান, ওআনতা তাজআলুল হুযনা সাহলান ইযা শিইতা।”
অর্থ : ইয়া আল্লাহ, কোনো বিষয় সহজ নয়। হ্যাঁ, যাকে তুমি সহজ করে দাও। যখন তুমি চাও তখন তুমি মুশকিলকে সহজ করে দাও। (ইবনে হিব্বান : ৯৭৪)

 

ইসলামের দৃষ্টিতে যৌন স্বাস্থ্য সুরক্ষা ও শক্তি বৃদ্ধিকারী খাদ্য-পানীয়

ইসলামের দৃষ্টিতে যৌন স্বাস্থ্য সুরক্ষা ও শক্তি বৃদ্ধিকারী খাদ্য-পানীয়

ইসলাম একটি পূর্ণাঙ্গ জীবন ব্যবস্থা। মানুষের এমন কোনো সমস্যা বা এমন কোনো দিক ও বিষয় নেই ইসলাম যে ব্যাপারে সমাধান বা পথ-নির্দেশনা প্রদান করেনি। একজন পুরুষ এবং একজন নারীর বৈধ সম্পর্ক-বিবাহের মাধ্যেম একটি পবিত্র সংসার রচিত হয়। একটি দাম্পত্য জীবনের সূচনা এবং যাপন নিশ্চত হয়। একটি সংসার বা একটি দাম্পত্য জীবনের নানান মৌলিক উপাদান-বিষয়ের মাঝে স্বামী-স্ত্রী যৌন জীবন অতি গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়। একজন স্বামী বা একজন স্ত্রী দাম্পত্য জীবনের এই যৌন আয়োজনে সুখি না হলে কোনো ভাবেই সুখি হয় না তাদের দাম্পত্য জীবন। যদিও একটি বিবাহ বা একটি সংসার-দাম্পত্য জীবনের মূল উদ্দেশ্য যৌনতা নয় তবুও মৌলিক এই উপাদানের অভাবে অনেক সময়ই ভেঙ্গে যায় অনেক সংসার। অথচ যৌন শক্তিকেন্দ্রিক এই অভাব-অক্ষমতা কিন্তু চিরস্থায়ী কোনো সমস্যা নয়। অনেক পুরুষ বা নারী নিজের অশুভ কর্মফলের কারণে এমন সমস্যায় ভোগেন আবার অনেকে এমন অভাব-অক্ষমতার শিকার হন বিভিন্ন পারিপার্শিক কারণে। কারণ যাই হোক সমস্যার সমাধান রয়েছে এবং ইসলাম এই প্রকারের সমস্যার সমাধানে বেশ গুরুত্ব প্রদান করেছে।
আল্লাহ মহানের সৃষ্টি অপার। মানুষের খাদ্য-পানীয় হিসেবে অসংখ্য-অগণিত নেয়ামত সৃষ্টি করেছেন তিনি। আমরা মানুষ এই সব খাদ্য-পানীয়কেন্দ্রিক নেয়ামত ছাড়া একেবারেই অচল। আল্লাহ মহান প্রদত্ত এই নেয়ামতের মাঝে এমন কিছু খাদ্য-পানীয় রয়েছে যেগুলো খাওয়ার দ্বারা মানুষের যৌন শক্তি কেন্দ্রিক বিভিন্ন অভাব-অক্ষমতা দূরীভূত হয় এবং যৌন শক্তি বৃদ্ধি লাভ করে। উল্লেখ্য যৌন শক্তি বৃদ্ধি করণ এই প্রক্রিয়াকে দাম্পত্য জীবনের সুখময়তা বৃদ্ধি এবং বৈবাহিক জীবনের নানান সমস্যা-অভাব-অক্ষমতাকে দূর করার পাথেয় হিসেবে গ্রহণ করাটাই একজন মুসলমানের ইমানি-নৈতিক দায়িত্ব।
হযরত আলী (রা.) বলেন, এক ব্যক্তি রাসূল (সা.) -এর কাছে এসে অভিযোগ করল যে, আমার ঘরে সন্তানাদি হয় না। একথা শুনে রাসূল (সা.) তাকে ব্যবস্থা দিলেন যে, তুমি ডিম খেতে থাকো।
তিরমিযি শরিফ ও অন্যান্য হাদিস গ্রন্থে উম্মে মুনযির (রা.) থেকে বর্ণিত আছে যে
,
একবার তিনি নবি কারিম (সা.) -এর সামনে কিছু খেজুর ও বিট লবন পেশ করেন। রাসূল (সা.) উপস্থিত হযরত আলীকে (রা.) খেজুর খেতে নিষেধ করলেন আর বিট লবন সম্পর্কে বললেন যে, এটা থেকে খাও। এটা তোমার জন্য উপকারী। হাদিস বিশারদগণ লিখেছেন যে, হযরত আলি (রা.) -এর তখন চোখে ব্যাথা ছিলো আর চোখে ব্যাথা অবস্থায় খেজুর খাওয়া ক্ষতিকর। এ কারণে রাসূল (সা.) হযরত আলীকে (রা.) খেজুর খেতে বারন করেন। আর বিট লবন সম্পর্কে বলেছেন এটা খাও, এটা তোমার জন্য উপকারী এবং তোমার অক্ষমতা দূর করে দেবে। হাদিস দ্বারা প্রমাণিত হয় যে, খাদ্যে সাবধানতা অবলম্বন করে চলা সুন্নাত। আর এটাও বুঝা গেল যে, বিট লবন খেলে দুর্বলতা দূর হয় এবং রতি শক্তিতে স্পন্দন সৃষ্টি হয়। [তিব্বে নববি]
ইমাম গাজালি (রহ.) তার রচিত এহইয়াউল উলুম গ্রন্থে লিখেছেন যে
,
চারটি বস্তু মানুষের যৌনশক্তি বৃদ্ধি করে।
১। চড়ই পাখি।
২। ত্রিফলা (হরিতকী, আমলকী ও বহেড়া)।
৩। পেস্তা।
৪। তাজা শাক-সবজি।
জেনে নিন কিছু যৌন শক্তি বৃদ্ধিকারী খাদ্য। হাকিম আবু নাঈম কিতাবুত তীব গ্রন্থে লিখেছেন, মাখনের সাথে খেজুর মিলিয়ে খাওয়া রাসূল (সা.)এর কাছে খুবই প্রিয় ছিল। আলেমগণ লিখেছেন, মাখনের সাথে খেজুর মিলিয়ে খেলে যৌনশক্তি বৃদ্ধি পায়, শরীরে গঠন বাড়ে ও কন্ঠস্বর পরিস্কার হয়। মাখন ও মধু একত্রে মিশ্রণ করে খেলে (Pleurisy) তথা বক্ষাবরক ঝিল্লি প্রদাহ রোগের উপকার হয় এবং শরীর মোটা করে। [তিব্বে নববি]
আবু নাঈম ইবনে আবদুল্লাহ জাফর কর্তৃক বর্ণিত আছে যে, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন
,
সীনার গোশত অন্য সব গোশত থেকে উত্তম হয়ে থাকে। হাদিস বিশারদগণ লিখেছেন যে, এর রহস্য হলো, এই গোশতে যৌন শক্তি বৃদ্ধি পায়। [তিব্বে নববি]
কোনো কোনো বর্ণনায় আছে যে, হযরত আয়েশা (রা.) কর্তৃক বর্ণিত আছে যে, রাসূল (সা.) হাসীস খুব পছন্দ করতেন। “হাসীস” তিনটি উপাদানে তৈরী হয়। খেজুর, মাখন ও জমাট দধি। এ খাদ্য দ্বারা শরীর শক্তিশালী হয় এবং রতি শক্তি বাড়ে। যায়তুন তেল খাওয়া ও মালিশ করা। তিল ও খেজুর একত্রে ব্যবহার করা। কালোজিরা এবং লুবিয়াও যৌন শক্তি বর্ধক। কালোজিরা এবং রসুনও যৌনশক্তি বৃদ্ধি করে।
হযরত হুযায়ল বিন হাকাম বলেন, রাসূল (সা.) বলেছেন
,
দেহের লোম তাড়াতাড়ি দূর করলে যৌনশক্তি বৃদ্ধি পায়। [তিব্বে নববি] ডাক্তারদের মতে এই হাদিসে বর্নিত লোম দ্বারা নাভির নীচের অবস্থিত লোমকে বোঝানো হয়েছে।

 

সূরা আয যুখরুফ (অর্থ, নামকরণ, শানে নুযূল, পটভূমি ও বিষয়বস্তু)

সূরা আয যুখরুফ (অর্থ, নামকরণ, শানে নুযূল, পটভূমি ও বিষয়বস্তু) 

নামকরণ
সূরার ৮৫ আয়াতের ——আরবী—– শব্দ থেকে এর নাম গৃহীত হয়েছে, অর্থাৎ যে সূরার মধ্যে —আরবী–‘যুখরুফ’ এটা সেই সূরা।
নাযিল হওয়ার সময়-কাল
কোন নির্ভরযোগ্য বর্ণনা থেকে নাযিল হওয়ার সময়-কাল সম্পর্কে জানা যায়নি। তবে সূরার বিষয়বস্তু সম্পর্কে চিন্তা- ভাবনা করলে স্পষ্ট উপলব্ধি করা যায়, যে যুগে সূরা আল-মু’মিন, হা-মীম আস সাজদা ও আশ্‌ শূরা নাযিল হয়েছিলো এ সূরাটিও সেই যুগেই নাযিল হয়। মক্কার কাফেররা যে সময় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের প্রাণ সংহার করতে বদ্ধ পরিকর হয়েছিলো সেই সময় যে সূরাগুলো নাযিল হয়েছিলে এ সূরাটিও তারই একটি বলে মনে হয়। সেই সময় মক্কার কাফেররা সভায় বসে বসে নবীকে (সা) কিভাবে হত্যা করা যায় তা নিয়ে পরামর্শ করতো । তাকে হত্যা করার জন্য একটি আক্রমন সংঘটিত হয়েছিলো ।৭৯ ও ৮০ আয়াতে এ পরিস্থিতির প্রতি ইংগিত রয়েছে।
বিষয়বস্তু ও মূল বক্তব্য
কুরাইশ ও আরববাসীরা যেসব জাহেলী আকীদা -বিশ্বাস ও কুসংস্কার আঁকড়ে ধরে চলছিলো এ সূরায় প্রবলভাবে তার সমালোচনা করা হয়েছে এবং অত্যন্ত মজবুত ও হৃদয়গ্রাহী পন্থায় ঐগুলোর অযৌক্তিকতা তুলে ধরা হয়েছে যাতে সমাজের যেসব ব্যক্তির মধ্যে কিঞ্চিত যুক্তিবাদিতাও আছে তারা সবাই একথা চিন্তা করতে বাধ্য হয় যে, এসব কেমন ধরনের অজ্ঞতা যা আমাদের জাতি চরমভাবে আঁকড়ে ধরে বসে আছে আর যে ব্যক্তি এই আবর্ত থেকে আমাদের উদ্ধারের প্রচেষ্টা চালাচ্ছেন আদাপানি খেয়ে তার বিরুদ্ধে লেগেছে।
বক্তব্যের সূচনা করা হয়েছে এভাবে যে, তোমরা চাচ্ছো তোমাদের দুষ্কর্মের ফলে এই কিতাব নাযিল হওয়া বন্ধ করে দেয়া হবে। কিন্তু আল্লাহ দুষ্কৃতিকারীদের কারণে কখনো নবী-রসূল প্রেরণ ও কিতাব নাযিল বন্ধ করেননি। বরং যে জালেমেরা তার হিদায়াতের পথ রোধ করে দাঁড়িয়েছিলো তাদেরকেই ধবংস করে দিয়েছেন। এখনো তিনি তাই করবেন। পরে আরো একটু অগ্রসর হয়ে আয়াত ৪১,৪৩ ও ৭৯, ৮০ তে এ বিষয়টির পুনরাবৃত্তি করা হয়েছে। যারা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের প্রাণ সংহার করতে বদ্ধপরিকর ছিল তাদের শুনিয়ে নবীকে (সা) বলা হয়েছে, তুমি জীবিত থাক বা না থাক এ জালেমদের আমি শাস্তি দেবই॥ তাছাড়া দুস্কৃতিকারীদেরকেও পরিষ্কার ভাষায় সাবধান করে দেয়া হয়েছে যে, তোমরা যদি আমর নবীর বিরুদ্ধে একটি পদক্ষেপ নেয়ার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে থাক তাহলে আমিও সে ক্ষেত্রে একটি চরম পদক্ষেপ নেয়ার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করবো।
এরপর যে ধর্মকে তারা বুকে আঁকড়ে ধরে আছে তা-কি সে সম্পর্কে বলা হয়েছে এবং যেসব যুক্তি প্রমাণ দেখিয়ে তারা মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের বিরোধিতা করছে তা তুলে ধরা হয়েছে।
এরা নিজেরাও স্বীকার করে যে, আল্লাহই যমীন, আসমান এবং এদের নিজেদের ও এদের উপাস্যদের সৃষ্টিকর্তা। এরা একথাও জানে এবং বিশ্বাস করে যে, যে নিয়ামত রাজি থেকে তারা উপকৃত হচ্ছে তা সবই আল্লাহর দেয়া। তারপরও আল্লাহর সার্বভৌম কর্তৃত্বের ব্যাপারে আল্লাহর সাথে অন্যদের শরীক করার ব্যাপারে গোঁ ধরে থাকে।
বান্দাদেরকে আল্লাহর সন্তান বলে ঘোষনা করে তাও আবার মেয়ে সন্তান হিসেবে। অথচ নিজেদের জন্য মেয়ে সন্তানকে লজ্জা ও অপমান বলে মনে করে।
তারা ফেরেশতাদেরকে দেবী মনে করে নিয়েছে। নারীর আকৃতি দিয়ে তাদের মূর্তি নির্মান করে রেখেছে। তাদেরকে মেয়েদের কাপড় ও অলংকার পরিধান করায় এবং বলে, এরা সব আল্লাহর কন্যা সন্তান। তাদের ইবাদত করা হয়, তাদের উদ্দেশ্যে মানত করা হয় এবং তাদের কাছেই উদ্দেশ্য সিদ্ধির জন্য দোয়া করা হয়। তারা একথা কি করে জানলো যে ফেরেশতারা নারী?
এসব অজ্ঞতার কারণে সমালোচনা করা হলে তাকদীরের বাহানা পেশ করে এবং বলে, আল্লাহ আমাদের এসব কাজ পছন্দ না করলে আমরা কি করে এসব মূর্তির পূজা করছি। অথচ আল্লাহর পছন্দ -অপছন্দ জানার মাধ্যম তাঁর কিতাব। পৃথিবীতে তাঁর ইচ্ছাধীনে যেসব কাজ হচ্ছে তা তার পছন্দ অপছন্দ অবহিত হওয়ার মাধ্যম নয়। তার ইচ্ছা বা অনুমোদনে শুধূ এক মূর্তি পূজাই নয়, চুরি, ব্যভিচার, ডাকাতি, খুন সব কিছুই হচ্ছে। পৃথিবীতে যত অন্যায় সংঘটিত হচ্ছে তার সবগুলোকেই কি এই যুক্তিতে বৈধ ও ন্যায় বলে আখ্যায়িত করা হবে?
যদি জিজ্ঞেস করা হয়, এই শিরকের সপক্ষে তোমাদের কাছে এই ভ্রান্ত যুক্তি-প্রমাণ ছাড়া কি আর কোন প্রমান আছে তখন জাবাব দেয়, বাপ-দাদার সময় থেকে তো এ কাজ এভাবেই হয়ে আসছে। এদের কাছে যেন কোন ধর্মের ন্যায় ও সত্য হওযার জন্য এই যুক্তি -প্রমানই যথেষ্ট। অথচ ইবরাহীম আলাইহিস সালাম-যার অধস্তন পুরুষ হওয়ার ওপরেই তাদের গর্ব ও মর্যাদার ভিত্তি-তার বাপ-দাদার ধর্মকে পদাঘাত করে বাড়ি ছেড়ে চলে গিয়েছিলেন এবং পূর্ব পুরুষদের এমন অন্ধ অনুসরণ প্রত্যাখ্যান করেছিলেন যার সপক্ষে কোন যুক্তিসংগত দলিল-প্রমাণ ছিল না। এসব সত্ত্বেও যদি তাদেরকে পূর্ব পুরুষদের অন্ধ অনুসরণই করতে হয় তাহলেও তো সর্বাপেক্ষা মর্যাদাবান পূর্ব পুরুষ ইবরাহীম ও ইসমাঈল আলাইহিমুস সালামকে ছেড়ে এরা নিজেদের চরম জাহেল পূর্ব পুরুষদের বাছাই করলো কেন?
এদের যদি জিজ্ঞেস করা হয়, আল্লাহর সাথে অন্যারাও উপাসনা লাভের যোগ্য, কোন নবী বা আল্লাহর পক্ষ থেকে প্রেরিত কোন একটি কিতাবও কি কখনো এ শিক্ষা দিয়েছে? এর জবাবে তারা খৃষ্টানদের হযরত ঈসা ইবনে মার্‌য়ামকে আল্লাহর বেটা হিসেবে মানার ও উপাসনা করাকে এ কাজের দলীল হিসেবে পেশ করে। অথচ কোন নবীর উম্মত শিরক করেছে বা করেনি প্রশ্ন সেটা ছিল না। প্রশ্ন ছিল কোন নবী শিরকের শিক্ষা দিয়েছেন কিনা? কবে ঈসা ইবনে মার্‌য়াম বলেছিলেন, আমি আল্লাহর পুত্র, তোমরা আমার উপাসনা করো। দুনিয়ার প্রত্যেক নবী যে শিক্ষা দিয়েছিলেন তার শিক্ষাও তাই ছিল। প্রত্যেক নবীর শিক্ষা ছিল আমাদের ও তোমাদের প্রত্যেকের রব আল্লাহ। তোমরা তারই ইবাদত করো।
মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের রিসালত মেনে নিতে তাদের মনে দ্বিধা শুধু এ কারণে যে, তার কাছে ধন-সম্পদ এবং ক্ষমতা ও জাঁকজমক তো মোটেই নেই। তারা বলে, আল্লাহ যদি আমাদের এখানে কাউকে নবী মনোনীত করতে চাইতেন তাহলে আমাদের দুটি বড় শহরের (মক্কা ও তায়েফ) গন্য মান্য ব্যক্তিদের কাউকে মনোনীত করতেন। এই যুক্তিতে ফিরাউনও হযরত মূসাকে নগণ্য মনে করে বলেছিলো, আসমানের বাদশা যদি যমীনের বাদশার কাছে (আমার কাছে) কোন দূত পাঠাতেন তাহলে তাকে স্বর্ণের বালা পরিয়ে এবং তার আর্দালী হিসেবে একদল ফেরেশতা সহ পাঠাতেন । এ মিসকীন কোত্থেকে আমার সামনে এসে হাজির হয়েছে হয়েছে। আমিই মর্যাদার অধিকারী। কারণ, মিসরের বাদশাহী আমার এবং এই নীল নদ আমার আজ্ঞাধীনেই প্রবাহিত হচ্ছে। আমর তুলনায় এ ব্যক্তির এমন কি মর্যাদা আছে! এর না আছে ধন-সম্পদ না আছে ক্ষমতা ও কর্তৃত্ব।
এভাবে কাফেরদের এক একটি অজ্ঞতাপ্রসূত কথার সমালোচনা করা এবং অত্যন্ত যুক্তিসঙ্গত ও সপ্রমাণ জবাব দেয়ার পর পরিস্কার বলা হয়েছে, না আল্লাহর কোন সন্তানাদি আছে, না আসমান ও যমীনের আল্লাহ আলাদা, না এমন কোন সুপারিশকারী আছে যে জেনে বুঝে গোমরাহীর পথ অনুসরণকারীদের আল্লাহর শাস্তি থেকে রক্ষা করতে পারে।আল্লাহর সন্তানাদি থাকবে এমন অবস্থা থেকে তার সত্তা পবিত্র। তিনি একাই গোটা বিশ্ব জাহানের খোদা। আর কেউ তার খোদায়ীর গুণাবলী এবং ক্ষমতা ও ইখতিয়ারে শরীক নয়, বরং সবাই তার বান্দা। তার দরবারে শাফায়াত কেবল সেই ব্যক্তিই করতে পারে যে নিজে ন্যায় ও সত্যপন্থী এবং তাদের জন করতে পারে যারা পৃথিবীতে ন্যায় ও সত্যের পথ অবলম্বন করেছিলো।
﴿بِسْمِ اللَّهِ الرَّحْمَٰنِ الرَّحِيمِ حم﴾
১) হা-মীম৷
﴿وَالْكِتَابِ الْمُبِينِ﴾
২) এই সুস্পষ্ট কিতাবের শপথ৷
﴿إِنَّا جَعَلْنَاهُ قُرْآنًا عَرَبِيًّا لَّعَلَّكُمْ تَعْقِلُونَ﴾
৩) আমি একে আরবী ভাষার কুরআন বানিয়েছি যাতে তোমরা তা বুঝতে পারো৷
﴿وَإِنَّهُ فِي أُمِّ الْكِتَابِ لَدَيْنَا لَعَلِيٌّ حَكِيمٌ﴾
৪) প্রকৃতপক্ষে এটা মূল কিতাবে লিপিবদ্ধ আছে যা আমার কাছে অত্যন্ত উচুঁ মর্যাদা সম্পন্ন ও জ্ঞানে ভরা কিতাব৷
﴿أَفَنَضْرِبُ عَنكُمُ الذِّكْرَ صَفْحًا أَن كُنتُمْ قَوْمًا مُّسْرِفِينَ﴾
৫) তোমরা সীমালংঘনকারী, শুধু এ কারণে কি আমি তোমাদের প্রতি অসন্তুষ্ট হয়ে উপদেশমূলক শিক্ষা পাঠানো পরিত্যাগ করবো?
﴿وَكَمْ أَرْسَلْنَا مِن نَّبِيٍّ فِي الْأَوَّلِينَ﴾
৬) পূর্ববর্তী জাতিসমূহের মধ্যেও আমি বার বার নবী পাঠিয়েছি৷
﴿وَمَا يَأْتِيهِم مِّن نَّبِيٍّ إِلَّا كَانُوا بِهِ يَسْتَهْزِئُونَ﴾
৭) এমন কখনো ঘটেনি যে তাদের কাছে কোন নবী এসেছে৷ কিন্তু তাকে বিদ্রুপ করা হয়নি৷
﴿فَأَهْلَكْنَا أَشَدَّ مِنْهُم بَطْشًا وَمَضَىٰ مَثَلُ الْأَوَّلِينَ﴾
৮) যারা এদের চাইতে বহুগুনে শক্তিশালী ছিল তাদেরকে আমি ধ্বংস করে দিয়েছি ৷ পূর্ববর্তী জাতিসমূহের উদাহরণ অতীত হয়ে গিয়েছে৷
﴿وَلَئِن سَأَلْتَهُم مَّنْ خَلَقَ السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضَ لَيَقُولُنَّ خَلَقَهُنَّ الْعَزِيزُ الْعَلِيمُ﴾
৯) তোমরা যদি এসব লোকদের জিজ্ঞেস করো, যমীন ও আসমান কে সৃস্টি করেছে, তাহলে এরা নিজেরাই বলবে, ঐগুলো সেই মহাপরাক্রমশালী ও মহাজ্ঞানী সত্তা সৃষ্টি করেছেন৷
﴿الَّذِي جَعَلَ لَكُمُ الْأَرْضَ مَهْدًا وَجَعَلَ لَكُمْ فِيهَا سُبُلًا لَّعَلَّكُمْ تَهْتَدُونَ﴾
১০) তিনিই তো সৃষ্টি করেছেন যিনি পৃথিবীকে তোমাদের জন্য দোলনা বানিয়েছেন এবং সেখানে তোমাদের জন্য রাস্তা তৈরী করে দিয়েছেন৷ যাতে তোমাদের গন্তব্যস্থলের পথ খুজেঁ পাও৷
﴿وَالَّذِي نَزَّلَ مِنَ السَّمَاءِ مَاءً بِقَدَرٍ فَأَنشَرْنَا بِهِ بَلْدَةً مَّيْتًا ۚ كَذَٰلِكَ تُخْرَجُونَ﴾
১১) যিনি আসমান থেকে একটি বিশেষ পরিমানে পানি বর্ষণ করেছেন  এবং তার সাহায্যে মৃত ভূমিকে জীবিত করে তুলেছেন৷ তোমাদের এভাবেই একদিন মাটির ভেতর থেকে বের করে আনা হবে৷
﴿وَالَّذِي خَلَقَ الْأَزْوَاجَ كُلَّهَا وَجَعَلَ لَكُم مِّنَ الْفُلْكِ وَالْأَنْعَامِ مَا تَرْكَبُونَ﴾
১২) তিনিই সেই মহান সত্তা যিনি সমস্ত জোড়া সৃষ্টি করেছেন৷  যিনি তোমাদের জন্য নৌকা – জাহাজ এবং জীব -জন্তুকে সওয়ারি বানিয়েছেন যাতে তোমরা তার পিঠে আরোহণ করো
﴿لِتَسْتَوُوا عَلَىٰ ظُهُورِهِ ثُمَّ تَذْكُرُوا نِعْمَةَ رَبِّكُمْ إِذَا اسْتَوَيْتُمْ عَلَيْهِ وَتَقُولُوا سُبْحَانَ الَّذِي سَخَّرَ لَنَا هَٰذَا وَمَا كُنَّا لَهُ مُقْرِنِينَ﴾
১৩) এবং পিঠের ওপর বসার সময় তোমাদের রবের ইহসান স্মরন করে বলোঃ পবিত্র সেই সত্তা যিনি আমাদের জন্য এসব জিনিসকে অনুগত করে দিয়েছেন৷ তা না হলে এদের আয়ত্বে আনার শক্তি আমাদের ছিল না৷
﴿وَإِنَّا إِلَىٰ رَبِّنَا لَمُنقَلِبُونَ﴾
১৪) এক দিন আমাদের রবের কাছে আমাদের ফিরে যেতে হবে৷
﴿وَجَعَلُوا لَهُ مِنْ عِبَادِهِ جُزْءًا ۚ إِنَّ الْإِنسَانَ لَكَفُورٌ مُّبِينٌ﴾
১৫) (এসব কিছু জানা এবং মানার পরেও) এসব লোক তার বান্দাদের মধ্য থেকেই কোন কোন বান্দাকে তার অংশ বানিয়ে দিয়েছে৷ প্রকৃত সত্য এই যে, মানুষ সুস্পষ্ট অকৃতজ্ঞ৷
﴿أَمِ اتَّخَذَ مِمَّا يَخْلُقُ بَنَاتٍ وَأَصْفَاكُم بِالْبَنِينَ﴾
১৬) আল্লাহ কি তার সৃষ্টির মধ্যে থেকে নিজের জন্য কন্যা বেছে নিয়েছেন এবং তোমাদের পুত্র সন্তান দিয়ে পুরস্কৃত করেছেন৷
﴿وَإِذَا بُشِّرَ أَحَدُهُم بِمَا ضَرَبَ لِلرَّحْمَٰنِ مَثَلًا ظَلَّ وَجْهُهُ مُسْوَدًّا وَهُوَ كَظِيمٌ﴾
১৭) অথচ অবস্থা এই যে, এসব লোক সেই দয়াময় আল্লাহর সাথে যে ধরনের সন্তানকে সম্পর্কিত করে এদের নিজেদের কাউকে যদি সেই সন্তানের জন্মলাভের সুসংবাদ দেয়া হয় তাহলে তার মুখমন্ডলে কালিমা ছেয়ে যায় এবং মন দু:খ ভারাক্রান্ত হয়ে ওঠে৷
﴿أَوَمَن يُنَشَّأُ فِي الْحِلْيَةِ وَهُوَ فِي الْخِصَامِ غَيْرُ مُبِينٍ﴾
১৮) আল্লাহর ভাগে কি সেই সব সন্তান যারা অলঙ্কারাদির মধ্যে বেড়ে ওঠে এবং বিতর্ক ও যুক্তি পেশের ক্ষেত্রে নিজের লক্ষ্য পুরোপুরি সুস্পষ্ট করতেও পারে না৷
﴿وَجَعَلُوا الْمَلَائِكَةَ الَّذِينَ هُمْ عِبَادُ الرَّحْمَٰنِ إِنَاثًا ۚ أَشَهِدُوا خَلْقَهُمْ ۚ سَتُكْتَبُ شَهَادَتُهُمْ وَيُسْأَلُونَ﴾
১৯) এরা ফেরেশতাদেরকে – যারা দয়াময় আল্লাহর খাস বান্দা৷  স্ত্রীলোক গন্য করেছে৷ এরা কি তাদের দৈহিক গঠন দেখেছে?  এদের সাক্ষ্য লিপিবদ্ধ করে নেয়া হবে এবং সে জন্য এদেরকে জবাবদিহি করতে হবে৷
﴿وَقَالُوا لَوْ شَاءَ الرَّحْمَٰنُ مَا عَبَدْنَاهُم ۗ مَّا لَهُم بِذَٰلِكَ مِنْ عِلْمٍ ۖ إِنْ هُمْ إِلَّا يَخْرُصُونَ﴾
২০) এরা বলে:“দয়াময় আল্লাহ যদি চাইতেন (যে আমরা তাদের ইবাদত না করি) তাহলে আমরা কখনো পূজা করতাম না ৷ এ বিষয়ে প্রকৃত সত্য এরা আদৌ জানে না, কেবলই অনুমানে কথা বলে৷
﴿أَمْ آتَيْنَاهُمْ كِتَابًا مِّن قَبْلِهِ فَهُم بِهِ مُسْتَمْسِكُونَ﴾
২১) আমি কি এর আগে এদেরকে কোন কিতাব দিয়েছিলাম (নিজেদের এই ফেরেশতা পূজার সপক্ষে) এরা যার সনদ নিজেদের কাছে সংরক্ষন করছে?
﴿بَلْ قَالُوا إِنَّا وَجَدْنَا آبَاءَنَا عَلَىٰ أُمَّةٍ وَإِنَّا عَلَىٰ آثَارِهِم مُّهْتَدُونَ﴾
২২) তা নয়, বরং এরা বলে, আমরা আমাদের বাপ-দাদাকে একটি পন্থার ওপর পেয়েছি, আমরা তাদেরই পদাঙ্ক অনুসরন করে করছি৷
﴿وَكَذَٰلِكَ مَا أَرْسَلْنَا مِن قَبْلِكَ فِي قَرْيَةٍ مِّن نَّذِيرٍ إِلَّا قَالَ مُتْرَفُوهَا إِنَّا وَجَدْنَا آبَاءَنَا عَلَىٰ أُمَّةٍ وَإِنَّا عَلَىٰ آثَارِهِم مُّقْتَدُونَ﴾
২৩) এভাবে তোমার পূর্বে আমি যে জনপদেই কোন সতর্ককারীকে পাঠিয়েছি, তাদের স্বচ্ছল লোকেরা একথাই বলেছে, আমরা আমাদের বাপ দাদাদেরকে একটি পন্থার করতে দেখেছি৷ আমরাও তাদেরই পদাঙ্ক অনুসরন করছি৷
﴿قَالَ أَوَلَوْ جِئْتُكُم بِأَهْدَىٰ مِمَّا وَجَدتُّمْ عَلَيْهِ آبَاءَكُمْ ۖ قَالُوا إِنَّا بِمَا أُرْسِلْتُم بِهِ كَافِرُونَ﴾
২৪) প্রত্যেক নবীই তাদের বলেছেন, তোমরা তোমাদের বাপ দাদাদের যে পথে চলতে দেখেছো আমি যদি তোমাদের তার চেয়ে অধিক সঠিক রাস্তা বলে দেই তাহলেও কি তোমরা সেই পথেই চলতে থাকবে? তারা সব রসূলকে এই জবাবই দিয়েছে, যে দীনের দিকে আহবান জানানোর জণ্য তুমি প্রেরিত হয়েছো, আমরা তা অস্বীকার করি৷
﴿فَانتَقَمْنَا مِنْهُمْ ۖ فَانظُرْ كَيْفَ كَانَ عَاقِبَةُ الْمُكَذِّبِينَ﴾
২৫) শেষ পর্যন্ত আমি তাদেরকে মার দিয়েছি এবং দেখে নাও, অস্বীকারকারীদের পরিণাম কি হয়েছে৷
﴿وَإِذْ قَالَ إِبْرَاهِيمُ لِأَبِيهِ وَقَوْمِهِ إِنَّنِي بَرَاءٌ مِّمَّا تَعْبُدُونَ﴾
২৬) স্মরণ করো সেই সময়টি যখন ইবরাহীম তার বাপ এবং কওমকে বলেছিলো৷  “তোমরা যাদের দাসত্ব করো তাদের সাথে আমার কোন সম্পর্ক নেই৷
﴿إِلَّا الَّذِي فَطَرَنِي فَإِنَّهُ سَيَهْدِينِ﴾
২৭) আমার সম্পর্ক শুধু তারই সাথে যিনি আমাকে সৃষ্টি করেছেন৷ তিনিই আমাকে পথপ্রদর্শন করবেন৷
﴿وَجَعَلَهَا كَلِمَةً بَاقِيَةً فِي عَقِبِهِ لَعَلَّهُمْ يَرْجِعُونَ﴾
২৮) ইবরাহীম এ কথাটি  তার পেছনে তার সন্তানদের মধ্যেও রেখে গিয়েছিলো, যাতে তারা এ দিকে ফিরে আসে৷
﴿بَلْ مَتَّعْتُ هَٰؤُلَاءِ وَآبَاءَهُمْ حَتَّىٰ جَاءَهُمُ الْحَقُّ وَرَسُولٌ مُّبِينٌ﴾
২৯) (এসব সত্ত্বেও যখন এরা অন্যদের দাসত্ব করতে শুরু করলো তখন আমি এদের ধবংস করে দিলাম আমি বরং এদের ও এদের বাপ দাদাদেরকে জীবনোপকরন দিতে থাকলাম এমনকি শেষ পর্যন্ত এদের কাছে ন্যায় ও সত্য এবং সুস্পষ্ট বর্ণনাকারী রসূল এসে গেল৷
﴿وَلَمَّا جَاءَهُمُ الْحَقُّ قَالُوا هَٰذَا سِحْرٌ وَإِنَّا بِهِ كَافِرُونَ﴾
৩০) কিন্তু ন্যায় ও সত্য যখন এদের কাছে আসলো তখন এরা বললোঃ এতো যাদু৷ আমরা তা মানতে অস্বীকৃতি জানাচ্ছি৷
﴿وَقَالُوا لَوْلَا نُزِّلَ هَٰذَا الْقُرْآنُ عَلَىٰ رَجُلٍ مِّنَ الْقَرْيَتَيْنِ عَظِيمٍ﴾
৩১) তারা বলে, দুটি শহরের বড় ব্যক্তিদের কারো ওপর এ কুরআন নাযিল করা হলো না কেন?
﴿أَهُمْ يَقْسِمُونَ رَحْمَتَ رَبِّكَ ۚ نَحْنُ قَسَمْنَا بَيْنَهُم مَّعِيشَتَهُمْ فِي الْحَيَاةِ الدُّنْيَا ۚ وَرَفَعْنَا بَعْضَهُمْ فَوْقَ بَعْضٍ دَرَجَاتٍ لِّيَتَّخِذَ بَعْضُهُم بَعْضًا سُخْرِيًّا ۗ وَرَحْمَتُ رَبِّكَ خَيْرٌ مِّمَّا يَجْمَعُونَ﴾
৩২) তোমার রবের রহমত কি এরা বণ্টন করে? দুনিয়ার জীবনে এদের মধ্যে জীবন যাপনের উপায় উপকরণ আমি বণ্টন করেছি এবং এদের মধ্য থেকে কিছু লোককে অপর কিছু সংখ্যক লোকের ওপর অনেক বেশী মর্যাদা দিয়েছি, যাতে এরা একে অপরের সেবা গ্রহণ করতে পার৷  (এদের নেতারা) যে সম্পদ অর্জন করছে তোমার রবের রহমত তার চেয়ে অনেক বেশি মূল্যবান৷
﴿وَلَوْلَا أَن يَكُونَ النَّاسُ أُمَّةً وَاحِدَةً لَّجَعَلْنَا لِمَن يَكْفُرُ بِالرَّحْمَٰنِ لِبُيُوتِهِمْ سُقُفًا مِّن فِضَّةٍ وَمَعَارِجَ عَلَيْهَا يَظْهَرُونَ﴾
৩৩) সমস্ত মানুষ একই পথের অনুসারি হয়ে যাবে যদি এই আশংকা না থাকত তাহলে যারা দয়াময় আল্লাহর সাথে কুফরি করে আমি তাদের ঘরের ছাদ,
﴿وَلِبُيُوتِهِمْ أَبْوَابًا وَسُرُرًا عَلَيْهَا يَتَّكِئُونَ﴾
৩৪) যে সিঁড়ি দিয়ে তারা তাদের বালাখানায় ওঠে সেই সিঁড়ি, দরজাসমূহ এবং যে সিংহাসনের ওপর তারা বালিশে হেলান দিয়ে বসে তা সবই রৌপ্য এবং স্বর্ণের বানিয়ে দিতাম৷
﴿وَزُخْرُفًا ۚ وَإِن كُلُّ ذَٰلِكَ لَمَّا مَتَاعُ الْحَيَاةِ الدُّنْيَا ۚ وَالْآخِرَةُ عِندَ رَبِّكَ لِلْمُتَّقِينَ﴾
৩৫) এগুলে তো শুধু পার্থিব জীবনের উপকরণ, তোমার রবের দরবারে আখেরাতে শুধু মুত্তাকীদের জন্য নির্দিষ্ট৷
﴿وَمَن يَعْشُ عَن ذِكْرِ الرَّحْمَٰنِ نُقَيِّضْ لَهُ شَيْطَانًا فَهُوَ لَهُ قَرِينٌ﴾
৩৬) যে ব্যক্তি রহমানের স্মরণ থেকে গাফিল থাকে আমি তার ওপর এক শয়তান চাপিয়ে দেই, সে তার বন্ধু হয়ে যায়৷
﴿وَإِنَّهُمْ لَيَصُدُّونَهُمْ عَنِ السَّبِيلِ وَيَحْسَبُونَ أَنَّهُم مُّهْتَدُونَ﴾
৩৭) এ শয়তানরা এসব লোকদেরকে সঠিক পথে আসতে বাধা দেয়, কিন্তু এরা মনে করে আমরা ঠিক পথেই চলছি৷
﴿حَتَّىٰ إِذَا جَاءَنَا قَالَ يَا لَيْتَ بَيْنِي وَبَيْنَكَ بُعْدَ الْمَشْرِقَيْنِ فَبِئْسَ الْقَرِينُ﴾
৩৮) অবশেষে যখন এ ব্যক্তি আমার কাছে পৌঁছবে তখন তার শয়তানকে বলবে : “আহা, যদি আমার ও তোমার মাঝে পূর্ব ও পশ্চিমের ব্যবধান হতো তুমি তো জঘন্যতম সাথী প্রমাণিত হয়েছো৷”
﴿وَلَن يَنفَعَكُمُ الْيَوْمَ إِذ ظَّلَمْتُمْ أَنَّكُمْ فِي الْعَذَابِ مُشْتَرِكُونَ﴾
৩৯) সেই সময় এদের বলা হবে, তোমরা যখন জুলুম করেছো তখন আজ একথা তোমাদের কোন উপকারে আসবে না৷ তোমরা ও তোমাদের শয়তানরা সমানভাবে আযাব ভোগ করবে৷
﴿أَفَأَنتَ تُسْمِعُ الصُّمَّ أَوْ تَهْدِي الْعُمْيَ وَمَن كَانَ فِي ضَلَالٍ مُّبِينٍ﴾
৪০) হে নবী, তাহলে এখন কি তুমি বধিরদের শোনাবে ? নাকি অন্ধ ও সুস্পষ্ট গোমরাহীর মধ্যে পড়ে থাকা লোকদের পথ দেখাবে?
﴿فَإِمَّا نَذْهَبَنَّ بِكَ فَإِنَّا مِنْهُم مُّنتَقِمُونَ﴾
৪১) আমি তোমাকে দুনিয়া থেকে উঠিয়ে নেই কিংবা এদেরকে যে পরিণামের প্রতিশ্রুতি আমি দিয়েছি তা তোমাকে চাক্ষুষ দেখিয়ে দেই এখন তো আমার এদেরকে শাস্তি দিতে হবে৷
﴿أَوْ نُرِيَنَّكَ الَّذِي وَعَدْنَاهُمْ فَإِنَّا عَلَيْهِم مُّقْتَدِرُونَ﴾
৪২) এদের বিরুদ্ধে আমি পূর্ণ ক্ষমতা রাখি৷
﴿فَاسْتَمْسِكْ بِالَّذِي أُوحِيَ إِلَيْكَ ۖ إِنَّكَ عَلَىٰ صِرَاطٍ مُّسْتَقِيمٍ﴾
৪৩) অহীর মাধ্যমে তোমার কাছে যে কিতাব পাঠানো হয়েছে সর্বাবস্থায় তুমি দৃঢ়ভাবে তা আঁকড়ে থাকো নিশ্চয়ই তুমি সোজা পথে আছো ৷
﴿وَإِنَّهُ لَذِكْرٌ لَّكَ وَلِقَوْمِكَ ۖ وَسَوْفَ تُسْأَلُونَ﴾
৪৪) প্রকৃত সত্য হলো, এ কিতাব তোমার ও তোমার কর্মের জন্য অনেক বড় একটি মর্যাদা এবং এ জন্য অচিরেই তোমাদের জবাবদিহি করতে হবে৷
﴿وَاسْأَلْ مَنْ أَرْسَلْنَا مِن قَبْلِكَ مِن رُّسُلِنَا أَجَعَلْنَا مِن دُونِ الرَّحْمَٰنِ آلِهَةً يُعْبَدُونَ﴾
৪৫) তোমার পূর্বে আমি যত রসূল পাঠিয়েছিলাম তাদের সবাইকে জিজ্ঞেস করে দেখো, আমি উপাসনার জন্য রহমান খোদা ছাড়া আর কোন উপাস্য নির্দিষ্ট করেছিলাম কিনা?
﴿وَلَقَدْ أَرْسَلْنَا مُوسَىٰ بِآيَاتِنَا إِلَىٰ فِرْعَوْنَ وَمَلَئِهِ فَقَالَ إِنِّي رَسُولُ رَبِّ الْعَالَمِينَ﴾
৪৬) আমি  মূসাকে আমার নিদর্শনসমূহসহ  ফেরাউন ও তার সভাসদদের কাছে পাঠিয়েছিলাম৷ সে গিয়ে তাদের বলেছিলো : আমি বিশ্ব জাহানের রবের রসূল৷
﴿فَلَمَّا جَاءَهُم بِآيَاتِنَا إِذَا هُم مِّنْهَا يَضْحَكُونَ﴾
৪৭) তারপর সে যখন তাদের সামনে আমার নিদর্শনসমূহ পেশ করলো তখন তারা বিদ্রূপ করতে লাগলো৷
﴿وَمَا نُرِيهِم مِّنْ آيَةٍ إِلَّا هِيَ أَكْبَرُ مِنْ أُخْتِهَا ۖ وَأَخَذْنَاهُم بِالْعَذَابِ لَعَلَّهُمْ يَرْجِعُونَ﴾
৪৮) আমি তাদেরকে একের পর এক এমন সব নিদর্শন দেখাতে থাকলাম যা আগেরটার চেয়ে বড় হতো৷ আমি তাদেরকে আযাবের মধ্যে লিপ্ত করলাম যাতে তারা তাদের আচরণ থেকে বিরত থাকে৷
﴿وَقَالُوا يَا أَيُّهَ السَّاحِرُ ادْعُ لَنَا رَبَّكَ بِمَا عَهِدَ عِندَكَ إِنَّنَا لَمُهْتَدُونَ﴾
৪৯) প্রত্যেক আযাবের সময় তারা বলতো,হে যাদুকর তোমার রবের পক্ষ থেকে তুমি যে পদমর্যাদা লাভ করেছো তার ভিত্তিতে আমাদের জন্য তার কাছে দোয়া করো৷‌ আমরা অবশ্যই সঠিক পথে এসে যাবো৷
﴿فَلَمَّا كَشَفْنَا عَنْهُمُ الْعَذَابَ إِذَا هُمْ يَنكُثُونَ﴾
৫০) কিন্তু আমি সেই মাত্র তাদের ওপর থেকে আযাব সরিয়ে দিতাম তারা তাদের প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ করতো৷
﴿وَنَادَىٰ فِرْعَوْنُ فِي قَوْمِهِ قَالَ يَا قَوْمِ أَلَيْسَ لِي مُلْكُ مِصْرَ وَهَٰذِهِ الْأَنْهَارُ تَجْرِي مِن تَحْتِي ۖ أَفَلَا تُبْصِرُونَ﴾
৫১) একদিন ফেরাউন তার কওমের মাঝে ঘোষনা করলো: হে জনগণ, মিসরের বাদশাহী কি আমার নয় এবং এসব নদী কি আমার অধীনে প্রবাহিত হচ্ছে না? তোমরা কি তা দেখতে পাচ্ছ না?
﴿أَمْ أَنَا خَيْرٌ مِّنْ هَٰذَا الَّذِي هُوَ مَهِينٌ وَلَا يَكَادُ يُبِينُ﴾
৫২) আমিই উত্তম না এই ব্যক্তি যে হীন ও নগণ্য এবং নিজের বক্তব্যও স্পষ্ট করে বর্ণনা করেত পারে না৷
﴿فَلَوْلَا أُلْقِيَ عَلَيْهِ أَسْوِرَةٌ مِّن ذَهَبٍ أَوْ جَاءَ مَعَهُ الْمَلَائِكَةُ مُقْتَرِنِينَ﴾
৫৩) তার কাছে সোনার বালা কেন পাঠানো হলো না? অথবা তার আরদালী হিসেবে একদল ফেরেশতা কেন আসলো না ৷
﴿فَاسْتَخَفَّ قَوْمَهُ فَأَطَاعُوهُ ۚ إِنَّهُمْ كَانُوا قَوْمًا فَاسِقِينَ﴾
৫৪) সে তার জাতিকে হালকা ও গুরুত্বহীন মনে করেছে এবং তারাও তার আনুগত্য করেছে৷ প্রকৃতপক্ষে তারা ছিল ফাসেক৷
﴿فَلَمَّا آسَفُونَا انتَقَمْنَا مِنْهُمْ فَأَغْرَقْنَاهُمْ أَجْمَعِينَ﴾
৫৫) অবশেষে তারা যখন আমাকে ক্রোধান্বিত করলো তখন আমি তাদের থেকে প্রতিশোধ গ্রহণ করলাম , তাদের সবাইকে এক সাথে ডুবিয়ে মারলাম
﴿فَجَعَلْنَاهُمْ سَلَفًا وَمَثَلًا لِّلْآخِرِينَ﴾
৫৬) এবং পরবর্তীদের জন্য অগ্রবর্তী ও শিক্ষণীয় উদাহরণ বাণিয়ে দিলাম৷
﴿وَلَمَّا ضُرِبَ ابْنُ مَرْيَمَ مَثَلًا إِذَا قَوْمُكَ مِنْهُ يَصِدُّونَ﴾
৫৭) আর যেই মাত্র ইবনে মারয়ামের উদাহরণ দেয়া হলো তোমার কওম হৈ চৈ শুরু করে দিলো
﴿وَقَالُوا أَآلِهَتُنَا خَيْرٌ أَمْ هُوَ ۚ مَا ضَرَبُوهُ لَكَ إِلَّا جَدَلًا ۚ بَلْ هُمْ قَوْمٌ خَصِمُونَ﴾
৫৮) এবং বলতে শুরু করলো : আমাদের উপাস্য উৎকৃষ্ট না সে?  তারা শুধু বিতর্ক সৃষ্টির জন্য তোমার সামনে এ উদাহরণ পেশ করেছে৷ সত্য কথা হলো, এরা মানুষই কলহ প্রিয়৷
﴿إِنْ هُوَ إِلَّا عَبْدٌ أَنْعَمْنَا عَلَيْهِ وَجَعَلْنَاهُ مَثَلًا لِّبَنِي إِسْرَائِيلَ﴾
৫৯) ইবনে মারয়াম আমার বান্দা ছাড়া আর কিছুই ছিল না৷ আমি তাকে নিয়ামত দান করেছিলাম এবং বনী ইসরাঈলদের জন্য আমার অসীম ক্ষমতার একটি নমুনা বানিয়েছিলাম৷
﴿وَلَوْ نَشَاءُ لَجَعَلْنَا مِنكُم مَّلَائِكَةً فِي الْأَرْضِ يَخْلُفُونَ﴾
৬০) আমি চাইলে তোমাদের পরিবর্তে ফেরেশতা সৃষ্টি করে দিতে পারি যারা পৃথিবীতে তোমাদের স্থলাভিষিক্ত হবে৷
﴿وَإِنَّهُ لَعِلْمٌ لِّلسَّاعَةِ فَلَا تَمْتَرُنَّ بِهَا وَاتَّبِعُونِ ۚ هَٰذَا صِرَاطٌ مُّسْتَقِيمٌ﴾
৬১) আর প্রকৃতপক্ষে সে তো কিয়ামতের একটি নিদর্শন৷ অতএব সে ব্যাপারে তোমরা সন্দেহ পোষণ করো না এবং আমার কথা মেনে নাও৷ এটাই সরল-সোজা পথ৷
﴿وَلَا يَصُدَّنَّكُمُ الشَّيْطَانُ ۖ إِنَّهُ لَكُمْ عَدُوٌّ مُّبِينٌ﴾
৬২) শয়তান যেন তা থেকে তোমাদের বিরত না রাখে৷ সে তো তোমাদের প্রকাশ্য দুশমন৷
﴿وَلَمَّا جَاءَ عِيسَىٰ بِالْبَيِّنَاتِ قَالَ قَدْ جِئْتُكُم بِالْحِكْمَةِ وَلِأُبَيِّنَ لَكُم بَعْضَ الَّذِي تَخْتَلِفُونَ فِيهِ ۖ فَاتَّقُوا اللَّهَ وَأَطِيعُونِ﴾
৬৩) ঈসা যখন সুস্পষ্ট নিদর্শনসমূহ নিয়ে এসেছিলো, বলেছিলো আমি তোমাদের কাছে হিকমত নিয়ে এসেছি যে, তোমরা যেসব বিষয়ে মতানৈক্য পোষণ করছো তার কিছু বিষয়ের তাৎপর্য প্রকাশ করবো৷ অতএব, তোমরা আল্লাহকে ভয় করো এবং আমার আনুগত্য করো৷
﴿إِنَّ اللَّهَ هُوَ رَبِّي وَرَبُّكُمْ فَاعْبُدُوهُ ۚ هَٰذَا صِرَاطٌ مُّسْتَقِيمٌ﴾
৬৪) প্রকৃত সত্য এই যে, আল্লাহই আমার ও তোমাদের রব৷ তারই ইবাদত করো৷ এটাই সরল-সোজা পথ৷
﴿فَاخْتَلَفَ الْأَحْزَابُ مِن بَيْنِهِمْ ۖ فَوَيْلٌ لِّلَّذِينَ ظَلَمُوا مِنْ عَذَابِ يَوْمٍ أَلِيمٍ﴾
৬৫) কিন্তু (তার এই সুস্পষ্ট শিক্ষা সত্ত্বেও) বিভিন্ন দল ও গোষ্ঠী পরস্পর মত পার্থক্য করলো৷ যারা জুলুম করেছে তাদের জন্য রয়েছে কষ্টদায়ক দিনের আযাব৷
﴿هَلْ يَنظُرُونَ إِلَّا السَّاعَةَ أَن تَأْتِيَهُم بَغْتَةً وَهُمْ لَا يَشْعُرُونَ﴾
৬৬) এখন এসব লোকেরা কি শুধু এ জন্যই অপেক্ষমান যে অকস্মাত এদের ওপর কিয়ামত এসে যাক এবং এরা আদৌ টের না পাক?
﴿الْأَخِلَّاءُ يَوْمَئِذٍ بَعْضُهُمْ لِبَعْضٍ عَدُوٌّ إِلَّا الْمُتَّقِينَ﴾
৬৭) যখন যে দিনটি আসবে তখন মুত্তাকীরা ছাড়া অবশিষ্ট সব বন্ধুই একে অপরের দুশমন হয়ে যাবে৷
﴿يَا عِبَادِ لَا خَوْفٌ عَلَيْكُمُ الْيَوْمَ وَلَا أَنتُمْ تَحْزَنُونَ﴾
৬৮) যারা আমার আয়াতসমূহের ওপর ঈমান এনেছিলো এবং আমার আদেশের অনুগত হয়েছিল
﴿الَّذِينَ آمَنُوا بِآيَاتِنَا وَكَانُوا مُسْلِمِينَ﴾
৬৯) সেই দিন তাদের বলা হবে, “হে আমার বান্দারা, আজ তোমাদের কোন ভয় নেই এবং কোন দুঃখও আজ তোমাদের স্পর্শ করবে না৷
﴿ادْخُلُوا الْجَنَّةَ أَنتُمْ وَأَزْوَاجُكُمْ تُحْبَرُونَ﴾
৭০) তোমরা এবং তোমাদের স্ত্রীরা জান্নাতে প্রবেশ করো৷ তোমাদের খুশী করা হবে৷”
﴿يُطَافُ عَلَيْهِم بِصِحَافٍ مِّن ذَهَبٍ وَأَكْوَابٍ ۖ وَفِيهَا مَا تَشْتَهِيهِ الْأَنفُسُ وَتَلَذُّ الْأَعْيُنُ ۖ وَأَنتُمْ فِيهَا خَالِدُونَ﴾
৭১) তাদের সামনে স্বর্ণের প্লেট ও পেয়ালাসমূহ আনা নেয়া করানো হবে এবং মনের মত ও দৃষ্টি পরিতৃপ্তকারী প্রতিটি জিনিস সেখানে থাকবে৷ তাদের বলা হবে, “এখন তোমরা এখানে চিরদিন থাকবে৷ পৃথিবীতে তোমরা যেসব কাজ করেছো
﴿وَتِلْكَ الْجَنَّةُ الَّتِي أُورِثْتُمُوهَا بِمَا كُنتُمْ تَعْمَلُونَ﴾
৭২) তার বিনিময়ে এ জান্নাতের উত্তরাধিকারী হয়েছো৷
﴿لَكُمْ فِيهَا فَاكِهَةٌ كَثِيرَةٌ مِّنْهَا تَأْكُلُونَ﴾
৭৩) তোমাদের জন্য এখানে প্রচুর ফল মজুদ আছে যা তোমরা খাবে৷
﴿إِنَّ الْمُجْرِمِينَ فِي عَذَابِ جَهَنَّمَ خَالِدُونَ﴾
৭৪) আর অপরাধীরা তারা তো চিরদিন জাহান্নামের আযাব ভোগ করবে৷
﴿لَا يُفَتَّرُ عَنْهُمْ وَهُمْ فِيهِ مُبْلِسُونَ﴾
৭৫) তাদের আযাব কখনো কম করা হবে না এবং তারা সেখানে নিরাশ অবস্থায় পড়ে থাকবে৷
﴿وَمَا ظَلَمْنَاهُمْ وَلَٰكِن كَانُوا هُمُ الظَّالِمِينَ﴾
৭৬) আমি তাদের প্রতি জুলুম করিনি৷ বরং তারা নিজেরাই নিজেদের প্রতি জুলুম করেছে৷
﴿وَنَادَوْا يَا مَالِكُ لِيَقْضِ عَلَيْنَا رَبُّكَ ۖ قَالَ إِنَّكُم مَّاكِثُونَ﴾
৭৭) তারা চিৎকার করে বলবে “হে মালেক৷ তোমার রব আমাদেরকে একেবারে ধ্বংস করে দেন তাহলে সেটাই ভাল” সে জবাবে বলবে : “তোমাদের এভাবেই থাকতে হবে৷
﴿لَقَدْ جِئْنَاكُم بِالْحَقِّ وَلَٰكِنَّ أَكْثَرَكُمْ لِلْحَقِّ كَارِهُونَ﴾
৭৮) আমরা তোমাদের কাছে ন্যায় ও সত্য নিয়ে গিয়েছিলাম৷ কিন্তু তোমাদের অধিকাংশের কাছে ন্যায় ও সত্য ছিল অপছন্দনীয়”৷
﴿أَمْ أَبْرَمُوا أَمْرًا فَإِنَّا مُبْرِمُونَ﴾
৭৯) এ লোকেরা কি কোন পদক্ষেপ গ্রহণের সিদ্ধান্ত নিয়েছে? বেশ তো! তাহলে আমিও একটি সিদ্ধান্ত নিচ্ছি৷
﴿أَمْ يَحْسَبُونَ أَنَّا لَا نَسْمَعُ سِرَّهُمْ وَنَجْوَاهُم ۚ بَلَىٰ وَرُسُلُنَا لَدَيْهِمْ يَكْتُبُونَ﴾
৮০) এরা কি মনে করেছে, আমি এদের গোপন এবং এদের চুপিসারে বলা কথা শুনতে পাই না!
﴿قُلْ إِن كَانَ لِلرَّحْمَٰنِ وَلَدٌ فَأَنَا أَوَّلُ الْعَابِدِينَ﴾
৮১) আমি সব কিছু শুনছি এবং আমার ফেরেশতা তাদের কাছে থেকেই তা লিপিবদ্ধ করছে৷ এদের বলো, “সত্যিই যদি রহমানের কোন সন্তান থাকতো তাহলে তার সর্বপ্রথম ইবাদতকারী হতাম আমি”৷
﴿سُبْحَانَ رَبِّ السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضِ رَبِّ الْعَرْشِ عَمَّا يَصِفُونَ﴾
৮২) আসমান ও যমীনের শাসনকর্তা আরশের অধিপতি এমন সমস্ত বিষয় থেকে পবিত্র যা এরা তার প্রতি আরোপ করে থাকে৷
﴿فَذَرْهُمْ يَخُوضُوا وَيَلْعَبُوا حَتَّىٰ يُلَاقُوا يَوْمَهُمُ الَّذِي يُوعَدُونَ﴾
৮৩) ঠিক আছে, যে দিনের ভয় তাদের দেখানো হচ্ছে সেই দিন না দেখা পর্যন্ত তাদেরকে বাতিল ধ্যান-ধারণার মধ্যে ডুবে এবং নিজেদের খেলায় মেতে থাকতে দাও৷
﴿وَهُوَ الَّذِي فِي السَّمَاءِ إِلَٰهٌ وَفِي الْأَرْضِ إِلَٰهٌ ۚ وَهُوَ الْحَكِيمُ الْعَلِيمُ﴾
৮৪) সেই একজনই আসমানেও আল্লাহ এবং যমীনেও আল্লাহ৷
﴿وَتَبَارَكَ الَّذِي لَهُ مُلْكُ السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضِ وَمَا بَيْنَهُمَا وَعِندَهُ عِلْمُ السَّاعَةِ وَإِلَيْهِ تُرْجَعُونَ﴾
৮৫) তিনি মহাকুশলী ও মহাজ্ঞানী৷ অনেক উচ্চ ও সম্মানিত সেই মহান সত্তা যার মুঠিতে যমীন ও আসমানসমূহ এবং যমীন ও আসমানের যা কিছু আছে তার প্রতিটি জিনিসের বাদশাহী৷  তিনিই কিয়ামতের সময়ের জ্ঞান রাখেন এবং তোমাদের সবাইকে তার কাছেই ফিরিয়ে নিয়ে যাওয়া হবে৷
﴿وَلَا يَمْلِكُ الَّذِينَ يَدْعُونَ مِن دُونِهِ الشَّفَاعَةَ إِلَّا مَن شَهِدَ بِالْحَقِّ وَهُمْ يَعْلَمُونَ﴾
৮৬) এরা তাকে বাদ দিয়ে যাদের ডাকে তারা শাফায়াতের কোন ইখতিয়ার রাখে না৷ তবে যদি কেউ জ্ঞানের ভিত্তিতে ন্যায় ও সত্যের সাক্ষ্য দান করে৷
﴿وَلَئِن سَأَلْتَهُم مَّنْ خَلَقَهُمْ لَيَقُولُنَّ اللَّهُ ۖ فَأَنَّىٰ يُؤْفَكُونَ﴾
৮৭) ঐদিন তোমরা এদের জিজ্ঞেস করো, কে এদের সৃষ্টি করেছে তাহলে এরা নিজেরাই বলবে, আল্লাহ৷ তাহলে কোথা থেকে এরা প্রতারিত হচেছ?
﴿وَقِيلِهِ يَا رَبِّ إِنَّ هَٰؤُلَاءِ قَوْمٌ لَّا يُؤْمِنُونَ﴾
৮৮) রসূলের এই কথার শপথ, হে রব, এরাই সেই সব লোক যারা মানছে না৷
﴿فَاصْفَحْ عَنْهُمْ وَقُلْ سَلَامٌ ۚ فَسَوْفَ يَعْلَمُونَ﴾
৮৯) ঠিক আছে, হে নবী, এদের উপেক্ষা করো এবং বলে দাও, তোমাদের সালাম জানাই৷ অচিরেই তারা জানতে পারবে৷

 

পবিত্র কুরআন সম্পর্কিত কিছু গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন ও উত্তরঃ

পবিত্র কুরআন সম্পর্কিত কিছু গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন ও উত্তরঃ 

 

প্রশ্নোত্তরে ইসলামী জ্ঞান (১০০-১৫০)

পবিত্র কুরআনঃ

১০০)প্রশ্নঃ পবিত্র কুরআনুল কারীমে কতটি সূরা আছে?
উত্তরঃ ১১৪টি।
১০১) প্রশ্নঃ পবিত্র কুরআনের প্রথম সূরার নাম কি?
উত্তরঃ সূরা ফাতিহা
১০২) প্রশ্নঃ পবিত্র কুরআনের সবচেয়ে বড় সূরার নাম কি?
উত্তরঃ সূরা বাকারা
১০৩) প্রশ্নঃ পবিত্র কুরআনের সবচেয়ে ছোট সূরার নাম কি?
উত্তরঃ সূরা কাওছার।
১০৪) প্রশ্নঃ পবিত্র কুরআনের মধ্যে সবচেয়ে বড় আয়াত কোনটি কোন সূরায়?
উত্তরঃ সূরা বাক্বারার ২৮২ নং আয়াত।
১০৫) প্রশ্নঃ পবিত্র কুরআনের মধ্যে সবচেয়ে ফযীলতপূর্ণ আয়াত কোনটি?
উত্তরঃ আয়াতুল কুরসী। (সূরা বাক্বারা ২৫৫ নং আয়াত।
১০৬) প্রশ্নঃ ফরয নামাযান্তে কোন আয়াতটি পাঠ করলেমৃত্যু ছাড়া জান্নাতে যেতে কোন বাধা থাকে না?
উত্তরঃ আয়াতুল কুরসী।
১০৭) প্রশ্নঃ পবিত্র কুরআনের কোন্ সূরাটি পাঠ করলে কবরের আযাব থেকে রক্ষা পাওয়া যাবে?
উত্তরঃ সূরা মুলক। (৬৭নং সূরা)
১০৮) প্রশ্নঃ পবিত্র কুরআনের কোন সূরাটি কুরআনের এক তৃতীয়াংশের সমান?
উত্তরঃ সূরা ইখলাছ। (112 নং সূরা)
১০৯) প্রশ্নঃ পবিত্র কুরআনের কোন সূরার প্রতি ভালবাসা মানুষকে জান্নাতে নিয়ে যাবে?
উত্তরঃ সূরা ইখলাছ।
১১০) প্রশ্নঃ কোন সূরাটি পবিত্র কুরআনের চতুর্থাংশের সমপরিমাণ?
উত্তরঃ সূরা কাফেরূন। (109 নং সূরা)
১১২. প্রশ্নঃ পবিত্র কুরআনের কোন সূরাটি জুমআর দিন বিশেষভাবে পাঠ করা মুস্তাহাব?
উত্তরঃ সূরা কাহাফ (18 নং সূরা))
১১৩) প্রশ্নঃ পবিত্র কুরআনের কোন সূরার প্রথমাংশ তেলাওয়াতকারীকে দাজ্জাল এর ফেতনা থেকে রক্ষা করবে?
উত্তরঃ সূরা কাহাফের প্রথম দশটি আয়াত। (18 নং সূরা))
১১৪) প্রশ্নঃ পবিত্র কুরআনের কোন দুটি সূরা জুমআর দিন ফজরের নামাযে তেলাওয়াত করা সুন্নাত?
উত্তরঃ সূরা সাজদা ও দাহার।
১১৫) প্রশ্নঃ পবিত্র কুরআনের কোন দুটি সূরা জুমআর নামাযে তেলাওয়াত করা সুন্নাত?
উত্তরঃ সূরা আ’লা ও গাশিয়া।
১১৬) প্রশ্নঃ পবিত্র কুরআন কত বছরে নাযিল হয়?
উত্তরঃ তেইশ বছরে।
১১৭) প্রশ্নঃ মুহাম্মাদ’ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামএর নাম পবিত্র কুরআনে কত স্থানে উল্লেখ হয়েছে?
উত্তরঃ চার স্থানে। (১) সূরা আল ইমরান আয়াত- ১৪৪। (২) সূরা আহযাব আয়াত নং ৪০। (৩) সূরা মুহাম্মাদ আয়াত নং ২। (৪) সূরা ফাতাহ্‌ আয়াত নং ২৯।
১১৮) প্রশ্নঃ পবিত্র কুরআনের সর্বপ্রথম কোন আয়াত নাযিল হয়?
উত্তরঃ সূরা আলাকের প্রথম পাঁচটি আয়াত। ইক্বরা বিসমি রাব্বিকাল্লাযী…..
১১৯) প্রশ্নঃ পবিত্র কুরআনের কোন আয়াতটি সর্বশেষ নাযিল হয়?
উত্তরঃ আল্লাহ্‌ বলেন, (وَاتَّقُوا يَوْمًا تُرْجَعُونَ فِيهِ إِلَى اللَّهِ ثُمَّ تُوَفَّى كُلُّ نَفْسٍ مَا كَسَبَتْ وَهُمْ لَا يُظْلَمُونَ) সূরা বাক্বারার ২৮১ নং আয়াত। (ইবনু আবী হাতেম সাঈদ বিন জুবাইর (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেন যে, এই আয়াত নাযিল হওয়ার পর নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) নয় দিন জীবিত ছিলেন।- আল ইতক্বান ফি উলূমিল কুরআন)
১২০) প্রশ্নঃ পবিত্র কুরআনের সর্বপ্রথম কোন সূরাটি পূর্ণাঙ্গরূপে নাযিল হয়?
উত্তরঃ সূরা ফাতিহা
১২১) প্রশ্নঃ পবিত্র কুরআন প্রথম যুগে কিভাবে সংরক্ষিত ছিল?
উত্তরঃ ছাহাবায়ে কেরামের স্মৃতিতে, লিখিত অবস্থায় চামড়ায়, হাড়ে, পাতায় এবং পাথরে।
১২২) প্রশ্নঃ সর্বপ্রথম কে কুরআন একত্রিত করেন?
উত্তরঃ আবু বকর (রাঃ)।
১২৩) প্রশ্নঃ কোন সাহাবীকে কুরআন একত্রিত করার দায়িত্ব দেয়া হয়েছিল?
উত্তরঃ যায়েদ বিন ছাবেত (রাঃ)কে।
১২৪) প্রশ্নঃ কার পরামর্শে এই কুরআন একত্রিত করণের কাজ শুরু হয়?
উত্তরঃ ওমর বিন খাত্তাব (রাঃ)
১২৫) প্রশ্নঃ রাসূলুল্লাহ্ (সাঃএর ওহী লেখক কে কে ছিলেন?
উত্তরঃ আলী বিন আবী তালেব, মুআবিয়া বিন আবী সুফিয়ান, যায়েদ বিন ছাবেত ও উবাই বিন কা’ব প্রমুখ (রাঃ)।
১২৬) প্রশ্নঃ কোন যুগে কার নির্দেশে কুরআনের অক্ষরে নকতা দেয়া হয়?
উত্তরঃ উমাইয়া খলীফা আবদুল মালিকের যুগে হাজ্জাজ বিন ইউসূফের নির্দেশে একাজ হয়।
১২৭) প্রশ্নঃ কুরআনে নকতা দেয়ার কাজটি কে করেন?
উত্তরঃ নসর বিন আছেম বিন ই’য়ামার (রহঃ)।
১২৮) প্রশ্নঃ কুরআনে কে হরকত (যের যবর পেশ ইত্যাদিসংযোজন করেন?
উত্তরঃ খলীল বিন আহমাদ আল ফারাহীদী (রহঃ)।
১২৯) প্রশ্নঃ পবিত্র কুরআনে কতবার ‘দুনিয়া’ শব্দটি এসেছে?
উত্তরঃ ১১৫ বার।
১৩০) প্রশ্নঃ পবিত্র কুরআনে কতবার ‘আখেরাত’ শব্দটি এসেছে?
উত্তরঃ ১১৫ বার।
১৩১) প্রশ্নঃ পবিত্র কুরআনে কতটি অক্ষর রয়েছে?
উত্তরঃ ৩২৩৬৭১টি।
১৩২)প্রশ্নঃ পবিত্র কুরআনে কতটি শব্দ আছে?
উত্তরঃ ৭৭৪৩৯টি।
১৩৩) প্রশ্নঃ পবিত্র কুরআনে কতটি আয়াত আছে?
উত্তরঃ ৬২৩৬টি।
১৩৪) প্রশ্নঃ কোন সূরার শেষ দুটি আয়াত কোন মানুষ রাত্রে পাঠ করলে তার জন্য যথেষ্ট হবে?
উত্তরঃ সূরা বাক্বারার শেষের আয়াত দু’টি। (285 ও ২৮৬ নং আয়ত)
১৩৫) প্রশ্নঃ পবিত্র কুরআনে কতটি সিজদা আছে এবং কোন কোন সূরায়?
উত্তরঃ১৫টি। আ’রাফ (২০৬নং আয়াত), রা’দ (১৫নং আয়াত), নাহাল (৪৯নং আয়াত), ইসরা (১০৭নং আয়াত), মারইয়াম (৫৮নং আয়াত), হাজ্জ (১৮ ও ৭৭ নং আয়াত), ফুরক্বান (৬০নং আয়াত), নামাল (২৫নং আয়াত), সজিদা (১৫নং আয়াত), সোয়াদ (২৪নং আয়াত), হা-মীম আস সাজদাহ (৩৭নং আয়াত), নাজম (৬২নং আয়াত), ইনশক্বিাক (২১নং আয়াত), আলাক (১৯নং আয়াত)।
১৩৬) প্রশ্নঃ কোন সূরায় দুটি সিজদা রয়েছে?
উত্তরঃ সূরা হজ্জ। (18 ও ৭৭ নং আয়াত)
১৩৭) প্রশ্নঃ পবিত্র কুরআনে কতবার ‘রহমান’ শব্দের উল্লেখ হয়েছে?
উত্তরঃ ৫৭ বার।
১৩৮)প্রশ্নঃ পবিত্র কুরআনে কতবার ‘জান্নাত’ শব্দ এসেছে?
উত্তরঃ ১৩৯ বার। (একবচন, দ্বিবচন ও বহুবচন শব্দে)
১৩৯) প্রশ্নঃ পবিত্র কুরআনে কতবার ‘জাহান্নাম’ শব্দ এসেছে?
উত্তরঃ ৭৭বার।
১৪০) প্রশ্নঃ পবিত্র কুরআনে কতবার ‘নার বা আগুন’ শব্দ এসেছে?
উত্তরঃ ১২৬বার।
140. প্রশ্নঃ পবিত্র কুরআনে কতবার ‘আল হামদু লিল্লাহি রাব্বিল আলামীন’ বাক্যটি এসেছে?
উত্তরঃ ৬বার।
141. প্রশ্নঃ পবিত্র কুরআনের কোন্ আয়াতে আরবী ২৯টি অক্ষরই রয়েছে?
উত্তরঃ সূরা ফাতাহ এর ২৯ নং আয়াতে।
142. প্রশ্নঃ সূরা ফাতিহায় ‘মাগযূবে আলাইহিম’ বলতে কাদেরকে বোঝানো হয়েছে এবং ‘যাল্লীন’ বলতে কাদেরকে বোঝানো হয়েছে?
উত্তরঃ ‘মাগযূবে আলাইহিম’ বলতে ইহুদীদেরকে এবং ‘যাল্লীন’ বলতে খৃষ্টানদেরকে বোঝানো হয়েছে।
143. প্রশ্নঃ পবিত্র কুরআনের কোন সূরায় ‘মীম’ অক্ষরটি নেই?
উত্তরঃ সূরা কাওছার।
144. প্রশ্নঃ পবিত্র কুরআনের কোন সূরায় ك ‘কাফ’ অক্ষরটি নেই?
উত্তরঃ সূরা কুরায়শ, ফালাক ও আছর।
145. প্রশ্নঃ পবিত্র কুরআনের কোন সূরায় দুবার বিসমিল্লাহির রহমানির রাহীম রয়েছে?
উত্তরঃ সূরা নামল। (২৭ নং সূরা)
146. প্রশ্নঃ কুরআনের কোন সূরার প্রথমে বিসমিল্লাহ নেই?
উত্তরঃ সূরা তাওবা। (৯নং সূরা)
147. প্রশ্নঃ পবিত্র কুরআনে মোট কতবার ‘বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহীম রয়েছে?
উত্তরঃ ১১৪ বার।
148. প্রশ্নঃ কোন্ সূরা সম্পর্কে ইমাম শাফেঈ বলেন, “মানুষের জন্য  সূরাটি ব্যতীত অন্য সূরা নাযিল না হলেও যথেষ্ট ছিল”?
উত্তরঃ সূরা আছর।
149. প্রশ্নঃ পবিত্র কুরআনে কতজন নবীর নাম উল্লেখ করা হয়েছে?
উত্তরঃ ২৫ জন।
150. প্রশ্নঃ মাক্কী সূরা  মাদানী সূরা বলতে কি বুঝায়?
উত্তরঃ মাক্কীঃ মদীনায় হিজরতের পূর্বে যা নাযিল হয়েছে।
মাদানীঃ মদীনায় হিজরতের পর যা নাযিল হয়েছে।

সহীহুল বুখারীর বঙ্গানুবাদ কিনতে চান কোন প্রকাশনীরটা কিনবেন? (Review)

সহীহুল বুখারীর বঙ্গানুবাদ কিনতে চান কোন প্রকাশনীরটা কিনবেন? (Review) 

 

আমাদের দেশে ইসলামী ইলম চর্চার ইতিহাস অনেক পুরোনো । কুরআন ও হাদীসের বঙ্গানুবাদও হয়েছে প্রায় দু’শো বছর । আমাদের দেশে অনেক গুলো প্রকাশনী সিয়াহ সিত্তাহ সহ আরো অনেক হাদীস সংকলন গ্রন্থ প্রকাশ করেছে । কিন্তু সব প্রকাশনীর প্রকাশনার মান এক রকম নয় । তাই আপনারা সব থেকে সেরা হাদীস গ্রন্থ সহীহুল বুখারীর বঙ্গানুবাদ কোন প্রকাশনী থেকে কিনবেন তার একটা পরামর্শ আপনাদের দিতে চাই ।
আমি সহীহুল বুখারীর খন্ড গুলি মোট তিনটি প্রকাশনী থেকে সংগ্রহ করেছি । এগুলো হচ্ছে ইসলামিক ফাউন্ডেশন বাংলাদেশ , আধুনিক প্রকাশনী ও তাওহীদ পাবলিকেশন্স ।এ তিনটির প্রকাশনার ভেতরে আমার তুলনামূলক তাওহীদ পাবলিকেশন্স এর প্রকাশনা বেশি ভাল লেগেছে । তাই আমি আপনাদের ওই প্রকাশনীর সহীহুল বুখারীর বঙ্গানুবাদ সংগ্রহ করার জন্য অনুরোধ করবো । তাওহীদ পাবলিকেশন্স এর প্রকাশনার বিশেষ বৈশিষ্ট্যগুলি এর ভূমিকা থেকে কিছু অংশ আমি এখানে তুলে ধরছিঃ
“আমাদের দেশে বাংলা ভাষায় হাদীস অনুবাদের কাজ যদিও বহু পূর্বেই শুরু হয়েছে তবুও বাংলা ভাষায় হাদীস চর্চায় আমরা পিছিয়ে । ফলে এখনও আমরা সহীহ হাদীস বাদ দিয়ে হাদীসের ব্যাপারে অশিক্ষিত অনভিজ্ঞ নামধারী কতিপয় আলিমদের মনগড়া ফাতাওয়ার উপর আমল করতে গিয়ে আমাদের আমলের ক্ষতি সাধন করছি । আর সাথে সাথে সহীহ হাদীস থেকে দূরে সরে গিয়ে আমরা তাকলীদের পথে পা বাড়াতে বাধ্য হচ্ছি ।
আমাদের দেশে যারা এ সকল সহীহ হাদীস গ্রন্থের অনুবাদ প্রকাশ করছেন তাদের অনেকেই আবার হাদীসের অনুবাদে সহীহ হাদীসের বিপরীতে মাযহাবী মতামতকে অগ্রাধিকার দিতে গিয়ে অনুবাদে গড়মিল ও জালিয়াতির আশ্রয় নিয়েছেন ।নমুনা স্বরুপ মূল বুখারীতে ইমাম বুখারী কিতাবুস সাওমের পরে কিতাবুত তারাবীহ নামক একটি পর্ব রচনা করেছেন । অথচ ভারতীয় মূদ্রণের মধ্যে …………… (?) কিতাবুত তারাবীহ কথাটি মুছে দিয়ে সেখানে কিয়ামুল লাইল বসানো হয়েছে । অবশ্য প্রকাশক পৃষ্ঠার একপাশে কিতাবুত তারাবীহ লিখে রেখেছেন । ….. (আরবী) ।     সকলেই এ ব্যাপারে একমত যে , এ অধ্যায় দ্বারা সলাতুত তারাবীহ উদ্দেশ্য । আর মিশর ও মধ্যপ্রাচ্য হতে প্রকাশিত সকল বুখারীতে কিতাবুত তারাবীহ বহাল তবিয়তে আছে , যা ছিল ইমাম বুখারীর সংকলিত মূল বুখারীতে ।
আর একটি প্রকাশনী জানি না ইচ্ছাকৃত ভাবে না অনিচ্ছাকৃত ভাবে এই কিতাবুত তারাবীহ নামটি ছেড়ে দিয়ে তৎসংশ্লিষ্ট হাদীস গুলোকে কিতাবুস সাওমে ঢুকিয়ে দিয়েছেন । অনেক স্থানে ইচ্ছাকৃত ভাবে ভুল অনুবাদ করেছেন । অনেক স্থানে অধ্যায়ের নাম পরিবর্তন করে ফেলেছেন । কোথাও বা মূল হাদীসকে অনুচ্ছেদে ঢুকিয়ে দিয়ে বুঝাতে চেয়েছেন যে , এটা হাদীসের মূল সংকলকের ব্যক্তিগত কথা বা মত । কোথাও বা সহীহ হাদীসের বিপরীতে মাযহাবী মাসআলা সম্বলিত লম্বা লম্বা টিকা লিখে সহীহ হাদীসকে ধামাচাপা দেয়ার ব্যর্থ চেষ্টায় লিপ্ত হয়েছেন । এতে করে সাধারণরা পড়ে গিয়েছেন বিভ্রান্তির মধ্যে । কারণ টিকা গুলো এমনভাবে লেখা হয়েছে যে , সাধারণ পাঠক মনে করবেন টিকাতে যা লেখা হয়েছে সেটাই ঠিক ; আসল তথ্য উদঘাটন করতে তারা ব্যর্থ হচ্ছেন । আরেক একজন শাইখুল হাদীসের বুখারীর অনুবাদের কথাতো বলার অপেক্ষাই রাখে না । তিনি বুখারীর অনুবাদ করেছেন না প্রতিবাদ করেছেন তা আমাদের বুঝে আসেনা । কারণ তিনি অনুবাদের চেয়ে প্রতিবাদমূলক টিকা লিখাকে বেশী প্রাধান্য দিয়েছেন , যা মূল কিতাবের সাথে একেবারেই সম্পর্কহীন । যে কোন হাদীস গ্রন্থের অনুবাদ করার অধিকার সবার জন্য উন্মুক্ত । কিন্তু সহীহ হাদীসের বিপরীতে অনুবাদে , ব্যাখ্যায় হাদীস বিরোধী কথা বলা জঘন্য অপরাধ ।
এই প্রথমবারের মত আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত হাদীস নম্বর ও অন্যান্য বহুবিধ বৈশিষ্ট্যসহ সহীহুল বুখারীর বঙ্গানুবাদ প্রকাশিত হল । শুধু তাই নয় , বেশ কয়েকটি উল্লেখযোগ্য বৈশিষ্ট্য রয়েছে এই প্রকাশনার মধ্যে যা এ পর্যন্ত প্রকাশিত সহীহুল বুখারীর বঙ্গানুবাদে পাওয়া যাবে না । এর মধ্যে উল্লেখ যোগ্য কয়েকটি বৈশিষ্ট্য হলো :
. আল-মু’জামুল মুফাহরাস লি আলফাযিল হাদীস হচ্ছে একটি বিষ্ময়কর হাদীস – অভিধান গ্রন্থ । গ্রন্থটিতে আরবি বর্ণমালার ধারা অনুযায়ী কুতুবুত ‍তিস’আহ ( বুখারী , মুসলিম , তিরমিযী , আবু দাউদ , নাসাঈ , ইবনু মাজাহ , মুসনাদ আহমাদ , মুওয়াত্তা ইমাম মালিক , দারেমী ) নয়টি হাদীস গ্রন্থের শব্দ আনা হয়েছে । যে কোন শব্দের পাশে সেটি কোন কোন হাদীস গ্রন্থে এবং কোন পর্বে বা কোন অধ্যায়ে আছে তা উল্লেখ রয়েছে ।
আমাদের দেশে এ গ্রন্থটি অতটা পরিচিতি লাভ না করলেও বিজ্ঞ আলিমগণ এটির সাথে খুবই পরিচিত । বিশেষ করে মধ্যপ্রাচ্যের সকল বিশ্ববিদ্যালয়ের হাদীস বিভাগের ছাত্র শিক্ষক সবার নিকট বেশ সমাদৃত । অত্র গ্রন্থের হাদীস গুলো আল মু’জামুল মুফাহরাসের ক্রমধারা অনুযায়ী সাজানো হয়েছে । যার ফলে অন্যান্য প্রকাশনার হাদীসের নম্বরের সাথে এর নম্বরের মিল পাওয়া যাবে না । আর এর সর্বমোট হাদীস সংখ্যা হবে ৭৫৬৩ টি । আধুনিক প্রকাশনীর হাদীস সংখ্যা হচ্ছে ৭০৪২ টি । আর ইসলামিক ফাউন্ডেশনের হাদীস সংখ্যা হচ্ছে ৬৯৪০ টি ।
. যে সব হাদীস একাধিকবার উল্লেখ হয়েছে অথবা হাদীসের অংশ বিশেষের সংগে মিল রয়েছে সেগুলোর প্রতিটি হাদীসের শেষে পূর্বোল্লিখিত ও পরোল্লিখিত হাদীসের নম্বর যোগ করা হয়েছে । যার ফলে একটি হাদীস বুখারীর কত জায়গায় উল্লেখ আছে বা সে বিষয়ের হাদীস কত জায়গায় রয়েছে তা সহজেই জানা যাবে । আর একই বিষয়ের উপর যাঁরা হাদীস অনুসন্ধান করবেন তাঁরা খুব সহজেই বিষয়ভিত্তিক হাদীস গুলো বের করতে পারবেন । যেমন ১০০১ নং হাদীস শেষে বন্ধনীর মধ্যে রয়েছে :  ( ১০০২ , ১০০৩ , ১৩০০ , ২৮০১ , ২৮১৪ , ৩৯৬৪ , ৩১৭০ , ৪০৮৮ , ৪০৮৯ , ৪০৯০ , ৪০৯১ , ৪০৯২ ,৪০৯৪ , ৪০৯৫ , ৪০৯৬ , ৬৩৯৪ , ৭৩৪১ ) বন্ধনীর হাদীস নম্বর গুলোর মধ্যে ১০০১ নং হাদীসে উল্লিখিত বিষয়ে আংশিক বা পূর্ণাঙ্গ আলোচনা পাওয়া যাবে ।
৩. বুখারীর কোন হাদীসের সঙ্গে সহীহ মুসলিমের কোন হাদীসের মিল থাকলে মুসলিমের পর্ব অধ্যায় ও হাদীস নম্বর প্রতিটি হাদীসের শেষে উল্লেখ করা হয়েছে । যেমন ১০০১ নং হাদীস শেষে বন্ধনীর মধ্যে রয়েছে : ( মুসলিম ৫/৫৪ হা/৬৭৭ ) অর্থাৎ পর্ব নং ৫ , অধ্যায় নং ৫৪ , হাদীস নং ৬৭৭   সহীহ মুসলিমের হাদীসের যে নম্বর উল্লেখ করা হয়েছে তা মু’জামুল মুফাহরাসের নম্বর তথা ফুয়াদ আব্দুল বাকী নির্ণিত নম্বরের সঙ্গে মিলবে ।
. বুখারীর কোন হাদীস যদি মুসনাদ আহমাদের সঙ্গে মিলে তাহলে মুসনাদ আহমাদের হাদীস নম্বর সেই হাদীসের শেষে যোগ করা হয়েছে । যেমন ১০০১ নং হাদীস শেষে বন্ধনীর মধ্যে রয়েছে : ( আহমাদ ১৩৬০২ ) এটির নম্বর এহইয়াউত তুরাস আল-ইসলামীর নম্বরের সঙ্গে মিলবে ।
৫. আমাদের দেশে মুদ্রিত ইসলামিক ফাউন্ডেশন ও আধুনিক প্রকাশনীর হাদীসের ক্রমিক নম্বরে অমিল রয়েছে । তাই প্রতিটি হাদীসের শেষে বন্ধনীর মাধ্যমে সে দুটি প্রকাশনার হাদীস নম্বর উল্লেখ করা হয়েছে । যেমন ১০০১ নং হাদীস শেষে বন্ধনীর মধ্যে রয়েছে : ( আ.প্র.৯৪২ ই.ফা.৯৪৭ ) অর্থাৎ আধুনিক প্রকাশনীর হাদীস নং ৯৪২ , আর ইসলামিক ফাউন্ডেশনের হাদীস নং ৯৪৭ ।
. প্রতিটি অধ্যায়ের ( অনুচ্ছেদ ) ক্রমিক নং এর সঙ্গে কিতারে ( পর্ব ) নম্বরও যুক্ত থাকবে যার ফলে সহজেই বোঝা যাবে এটি কত নম্বর কিতাবের কত নম্বর অধ্যায় । যেমন ১০০১ নং হাদীসের পূর্বে একটি অনুচ্ছেদ রয়েছে যার নম্বর ১৪/৭ অধ্যায় : অর্থাৎ ১৪ নং পর্বের ৭ নং অধ্যায় ।
৭. যারা সহীহ বুখারীর অনুবাদ করতে গিয়ে সহীহ হাদীসকে ধামাচাপা দিয়ে যঈফ হাদীসকে প্রাধান্য দেয়ার জন্য বা মাযহাবী অন্ধ তাকলীদের কারণে লম্বা লম্বা টিকা লিখেছেন তাদের সে টিকার দলীল ভিত্তিক জবাব দেয়া হয়েছে ।
. আরবী নামের বিকৃত বাংলা উচ্চারণ রোধকল্পে প্রায় প্রতিটি আরবী শব্দের বিশুদ্ধ বাংলা উচ্চারণের চেষ্টা করা হয়েছে । যেমন : আয়েশা এর পরিবর্তে ‘আয়িশাহ্ , জুম্মা এর পরিবর্তে জুমু‘আহ্ , নবী এর পরিবর্তে নাবী , রাসূল এর পরিবর্তে রসূল , ম্ক্কা এর পরিবর্তে মাক্কাহ , ইবনে এর পরিবর্তে ইবনু , উম্মে সালমা এর পরিবর্তে উম্মু সালামাহ্ , নামায এর পরিবর্তে সলাত ইত্যাদি ইত্যাদি প্রচলিত বানানে ব্যাপক পরিবর্তন আনা হয়েছে ।
. সাধারণের পাশাপাশি আলিমগণও যেন এর থেকে উপকৃত হতে পারেন সে জন্য অধ্যায় ভিত্তিক বাংলা সূচি নির্দেশিকার পাশাপাশি আরবী সূচি উল্লেখ করা হয়েছে ।
১০. বুখারীর কত জায়গায় কুরআনের আয়াত এসেছে এমনকি আয়াতের একটি শব্দ আসলেও সেটির সূরার নাম , আয়াত নম্বর উল্লেখ করা হয়েছে ।
১১. ইনশাআল্লাহ সমৃদ্ধ অধ্যায় ভিত্তিক সূচি নির্দেশিকা সহ প্রতিটি খন্ডে থাকবে সংক্ষিপ্ত পর্বভিত্তিক বিশেষ সূচি নির্দেশিকা । এতে কোন পর্বে কতটি অধ্যায় ও কতটি হাদীস রয়েছে তা সংক্ষিপ্তভাবে জানা যাবে ।
১২. হাদীসে কুদসী চিহ্নিত করে হাদীসের নম্বর উল্লেখ ।
১৩. মুতাওয়াতির ১৪. মারফু’ ১৫. মাওকুফ ও ১৬. মাকতু হাদীস নির্দেশিকা প্রণয়ন করা হয়েছে । ফলে সে হাদীস গুলোকে সহজেই চিহ্নিত করা যাবে ।
১৭. প্রতিটি খন্ডের শেষে পরবর্তি খন্ডের কিতাব/পর্বভিত্তিক সূচি নির্দেশিকা উল্লেখ করা হয়েছে ।”
শুধু সহীহ বুখারী নয় যে কোন হাদীস গ্রন্থই তাওহীদ পাবলিকেশন্স থেকে কেনার জন্য আমার সু-পরামর্শ থাকলো । কারণ বুখারী মুসলিম ছাড়া অন্যান্য হাদীস গন্থে কিছু কিছু জাল ও যঈফ হাদীসও রয়েছে । যেগুলোর উপর আমল করা নিষিদ্ধ । একমাত্র তাওহীদ পাবলিকেশন্সই বিখ্যাত মুহাদ্দিস আল্লামা নাসির উদ্দিন আলবানী (রহঃ) এর তাহক্বীক্ব করা হাদীস গন্থ এর অনুবাদ প্রকাশ করেছে । আশা করি  ইসলামের বাণী.নেট তাওহীদ পাবলিকেশন্স এর অন্যান্য হাদীস গ্রন্থ এবং সহীহ আক্বীদা এবং আমলের গ্রন্থও ভবিষ্যতে উপহার দিবে ।
আল্লাহ আমাদের যঈফ ও জাল হাদীস থেকে বাঁচার এবং সহীহ হাদীসের উপর সঠিকভাবে আমল করার তাওফীক দান করুন – আমীন ।

মুহররম ও আশুরার ফজিলত (পবিত্র কুরআন ও হাদিসের আলোকে)।

মুহররম ও আশুরার ফজিলত (পবিত্র কুরআন ও হাদিসের আলোকে)। 

 রবন্ধটি পড়া হলে, শেয়ার করতে ভুলবেন না

রহমান রহীম আল্লাহ্‌ তায়ালার নামে-
লেখক : মুহাম্মাদ সালেহ আল মুনাজ্জিদ অনুবাদক : ইকবাল হোছাইন মাছুম।

الحمد لله رب العالمين، والصلاة والسلام على نبينا محمد خاتم الأنبياء وسيد المرسلين وعلى آله وصحبه أجمعين وبعد

মুহররম, একটি মহান বরকতময় মাস। হিজরি সনের প্রথম মাস । এটি ‘আশহুরে হুরুম’ তথা হারামকৃত মাস চতুষ্টয়ের অন্যতম। আশহুরে হুরুম সম্বদ্ধে আল্লাহ তাআলা বলেন,

إِنَّ عِدَّةَ الشُّهُورِ عِنْدَ اللَّهِ اثْنَا عَشَرَ شَهْرًا فِي كِتَابِ اللَّهِ يَوْمَ خَلَقَ السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضَ مِنْهَا أَرْبَعَةٌ حُرُمٌ ذَلِكَ الدِّينُ الْقَيِّمُ فَلَا تَظْلِمُوا فِيهِنَّ أَنْفُسَكُمْ ﴿36﴾[التوبة:36].

নিশ্চয় মাসসমূহের গণনা আল্লাহর কাছে বার মাস আল্লাহর কিতাবে, (সেদিন থেকে) যেদিন তিনি আসমান ও যমীন সৃষ্টি করেছেন। এর মধ্য থেকে চারটি সম্মানিত, এটাই প্রতিষ্ঠিত দীন। সুতরাং তোমরা এ মাসসমূহে নিজদের উপর কোন জুলুম করো না।{সূরা তাওবা:৩৬}
সাহাবি আবু বাকরাহ রা. নবী কারিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণনা করেন, নবীজী বলেন,

{السَّنَةُ اثْنَا عَشَرَ شَهْرًا مِنْهَا أَرْبَعَةٌ حُرُمٌ: ثَلاثَةٌ مُتَوَالِيَاتٌ ذُو الْقَعْدَةِ وَذُو الْحِجَّةِ وَالْمُحَرَّمُ، وَرَجَبُ مُضَرَ الَّذِي بَيْنَ جُمَادَى وَشَعْبَانَ } [رواه البخاري 2958]

বছর হলো বারোটি মাসের সমষ্টি, তার মধ্যে চারটি অতি সম্মানিত। তিনটি পর পর লাগোয়া জিলকদ, জিলহজ ও মুহররম আর (চতুর্থটি হলো) জুমাদাস সানি ও শাবানের মধ্যবর্তী রজব। {বোখারি:২৯৫৮}
মুহররমকে মুহররম বলে অভিহিত করা হয়েছে কারণ এটি অতি সম্মানিত।
আল্লাহর বাণী

فَلا تَظْلِمُوا فِيهِنَّ أَنْفُسَكُمْ

“তোমরা এতে নিজেদের উপর কোনো জুলুম করো না।”
অর্থাৎ, এই সম্মানিত মাস সমূহে তোমরা কোনো অন্যায় করো না। কারণ এ সময়ে সংঘটিত অন্যায় ও অপরাধের পাপ অন্যান্য সময়ের চেয়ে বেশি ও মারাত্মক।
আব্দুল্লাহ বিন আব্বাস (রা:) এই আয়াতের ব্যাখ্যায় বলেছেন, এই বারো মাসের কোনোটিতেই তোমরা অন্যায় অপরাধে জড়িত হয়ো না। অত:পর তাহতে চারটি মাসকে বিশেষভাবে নির্দিষ্ট করেছেন। তাদেরকে মহা সম্মানে সম্মানিত করেছেন। এসবের মাঝে সংঘটিত অপরাধকে অতি মারাত্মক অপরাধ বলে গণ্য করেছেন। আর তাতে সম্পাদিত নেক আমলকে বেশি সাওয়াব যোগ্য নেক আমল বলে সাব্যস্ত করেছেন।
কাতাদাহ  (রা:) এই আয়াতের ব্যাখ্যায় বলেছেন, যদিও জুলম সব সময়ের জন্য বড় অন্যায় তবে হারাম মাস চতুষ্টয়ে সম্পাদিত জুলুম অন্যান্য সময়ে সম্পাদিত জুলুম হতে অপরাধ ও পাপের দিক থেকে আরও বেশি মারাত্মক অন্যায়। আল্লাহ তাআলা নিজ ইচ্ছা মাফিক যাকে ইচ্ছা বড় করতে পারেন।
তিনি বলেন, মহান আল্লাহ নিজ সৃষ্টি হতে খাঁটি ও উৎকৃষ্টগুলোকে বাছাই করেছেন; ফেরেশতাকুল হতে কতককে রাসূল হিসাবে বাছাই করেছেন অনুরূপ মানুষ থেকেও। কথা হতে বাছাই করেছেন তাঁর জিকিরকে। আর জমিন হতে বাছাই করেছেন মসজিদ সমূহকে। মাসসমূহ থেকে বাছাই করেছেন রমজান ও সম্মানিত মাস চতুষ্টয়কে। দিনসমূহ হতে বাছাই করেছেন জুমুআর দিনকে আর রাত্রসমূহ থেকে লাইলাতুল কদরকে। সুতরাং আল্লাহ যাদের সম্মানিত করেছেন তোমরা তাদের সম্মান প্রদর্শন কর। আর বুদ্ধিমান লোকদের মতে, প্রতিটি বস্তুকে যথাযথ সম্মান প্রদর্শন করা হয় মূলত: সেসব জিনিসের মাধ্যমেই যেসব দ্বারা আল্লাহ তাদেরকে সম্মানিত করেছেন। {সার সংক্ষেপ, তাফসির ইবন কাসির, সূরা তাওবা, আয়াত ৩৬}
মুহররম মাসে অধিক পরিমাণে নফল রোজার ফজিলত
আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন,

{ أَفْضَلُ الصِّيَامِ بَعْدَ رَمَضَانَ شَهْرُ اللَّهِ الْمُحَرَّمُ }

অর্থাৎ, রমজানের পর সর্বোত্তম রোজা হচ্ছে আল্লাহর মাস মুহররম (মাসের রোজা)। { সহিহ মুসলিম,১৯৮২}
شَهْرُ اللَّهِ বাক্যে شَهْر কে اللَّهِ -এর দিকে যে إضافة করা হয়েছে এটি إضافة تعظيمঅর্থাৎ, সম্মানের ইযাফত। আল্লামা ক্বারী রহ. বলেন, হাদিসের বাহ্যিক শব্দমালা থেকে পূর্ণ মাসের রোজা বুঝে আসে। তবে নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রমজান ব্যতীত আর কোনো মাসে পূর্ণ মাস রোজা রাখেননি, এটি প্রমাণিত। তাই হাদিসকে এ মাসে বেশি পরিমাণে রোজা রাখার ব্যাপারে উৎসাহ দেয়া হয়েছে বলে ধরা হবে।
শা’বান মাসে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম অধিক রোজা রেখেছেন বলে একাধিক সূত্রে বর্ণিত হয়েছে। হতে পারে মুহররম মাসের ফজিলত সম্বন্ধে তাঁকে একেবারে জীবনের শেষ পর্যায়ে অবহিত করা হয়েছে আর তিনি তা বাস্তবায়ন করে যাবার সময় পাননি। {ইমাম নববি, শারহু সহিহ মুসলিম}
আল্লাহ তাআলা স্থান ও কাল যাকে ইচ্ছা মর্যাদা দিয়ে থাকেন
আল্লামা ইজ্জ বিন আব্দুস সালাম রহ. বলেন, স্থান ও কালের একের উপর অপরের মর্যাদা দান দুই প্রকার। এক. পার্থিব। দুই. দ্বীনী, যা আল্লাহর দয়া ও করুণার উপর নির্ভরশীল। তিনি সেসব স্থান বা কালে ইবাদত সম্পন্নকারীদের সাওয়াব বৃদ্ধি করে দিয়ে তাদের উপর করুণা করেন। যেমন, অন্যান্য মাসের রোজার তুলনায় রমজানের রোজার মর্যাদা অনুরূপ আশুরার দিন..। এগুলোর মর্যাদা আল্লাহর দান ও ইহসানের উপর নির্ভরশীল। {কাওয়ায়েদুল আহকাম:১/৩৮}
ইতিহাসে আশুরা
আব্দুল্লাহ বিন আব্বাস রা. হতে বর্ণিত, তিনি বলেন,

قال: قدم النبي – صلى الله عليه وسلم – المدينة فرأى اليهود تصوم يوم عاشوراء فقال: { مَا هَذَا قَالُوا هَذَا يَوْمٌ صَالِحٌ، هَذَا يَوْمٌ نَجَّى اللَّهُ بَنِي إِسْرَائِيلَ مِنْ عَدُوِّهِمْ فَصَامَهُ مُوسَى، قال: فَأَنَا أَحَقُّ بِمُوسَى مِنْكُمْ فَصَامَهُ وَأَمَرَ بِصِيَامِهِ } [رواه البخاري 1865].

নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মদিনায় আগমন করে দেখতে পেলেন ইহুদিরা আশুরার দিন রোজা পালন করছে। নবীজী বললেন, এটি কি? তারা বলল, এটি একটি ভাল দিন। এ দিনে আল্লাহ তাআলা বনি ইসরাইলকে তাদের দুশমনের কবল থেকে বাঁচিয়েছেন। তাই মুসা আ. রোজা পালন করেছেন। রাসূলুল্লাহ বললেন, মুসাকে অনুসরণের ব্যাপারে আমি তোমাদের চেয়ে অধিক হকদার। অত:পর তিনি রোজা রেখেছেন এবং রোজা রাখার নির্দেশ দিয়েছেন।{বোখারি:১৮৬৫}
বোখারির বর্ণনা,
{ هَذَا يَوْمٌ صَالِحٌ } এটি একটি ভাল দিন।
মুসলিমের বর্ণনায় আছে,

{ هذا يوم عظيم أنجى الله فيه موسى وقومه وغرّق فرعون وقومه }

এটি একটি মহান দিন, আল্লাহ তাআলা তাতে মুসা আ. ও তাঁর কওমকে রক্ষা করেছেন আর ফেরাউন ও তার সম্প্রদায়কে পানিতে ডুবিয়ে মেরেছেন।
বোখারির বর্ণনা,

{ فصامه موسى }

মুসা আ. রোজা পালন করেছেন।
ইমাম মুসলিম তার রেওয়ায়াতে সামান্য বাড়িয়ে বর্ণনা করেছেন,

{ شكراً لله تعالى فنحن نصومه }

আল্লাহ তাআলার শুকরিয়া আদায় স্বরূপ তাই আমরাও রোজা পালন করি।
বোখারির অন্য রেওয়ায়াতে আছে,

{ ونحن نصومه تعظيماً له }

আর আমরা রোজা পালন করি তার সম্মানার্থে।
ইমাম আহমাদ সামান্য বর্ধিতাকারে বর্ণনা করেছেন,

{ وهو اليوم الذي استوت فيه السفينة على الجودي فصامه نوح شكراً }.

এটি সেই দিন যাতে নূহ আ.-এর কিশতি জুদি পর্বতে স্থির হয়েছিল, তাই নূহ আ. আল্লাহর শুকরিয়া আদায়ার্থে সেদিন রোজা রেখেছিলেন।
বোখারির বর্ণনা,
{ وأمر بصيامه } এবং রোজা রাখার নির্দেশ দিয়েছেন।
বোখারির অন্য বর্ণনায় এসেছে,

{ فقال لأصحابه: أنتم أحق بموسى منهم فصوموا }.

তিনি তাঁর সাহাবিদের বললেন, মুসা আ.-কে অনুসরণের ক্ষেত্রে তোমরা তাদের চেয়ে অধিক হকদার। সুতরাং তোমরা রোজা রাখ।
আশুরার রোজা পূর্ব হতেই প্রসিদ্ধ ছিল এমনকি রাসূলুল্লাহর নবুওয়ত প্রাপ্তির পূর্বে জাহেলি যুগেও আরব সমাজে তার প্রচলন ছিল।
আয়েশা রা. থেকে বর্ণিত হয়েছে, তিনি বলেন, জাহেলি যুগের লোকেরা আশুরাতে রোজা রাখত।..

{ إن أهل الجاهلية كانوا يصومونه }..

জাহেলি যুগের লোকেরা আশুরাতে রোজা রাখত।..
ইমাম কুরতুবি রহ. বলেন, ]
কোরাইশরা আশুরার রোজা প্রসঙ্গে সম্ভবত বিগত শরিয়ত যেমন ইবরাহীম আ.-এর উপর নির্ভর করত। হাদিসে বর্ণিত হয়েছে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মদিনায় হিজরাত করার পূর্বেই মক্কাতে আশুরার রোজা রাখতেন। হিজরতের পর দেখতে পেলেন মদিনার ইহুদিরা এদিনকে উদযাপন করছে। তিনি কারণ সম্বন্ধে তাদের জিজ্ঞেস করলে তারা উপরোল্লেখিত উত্তর দিল। তখন নবীজী সাহাবাদেরকে ঈদ-উৎসব উদযাপন প্রসঙ্গে ইহুদিদের বিরোধিতা করার নির্দেশ দিলেন। যেমন আবু মুসা রা. কর্তৃক বর্ণিত হাদিসে এসেছে, তিনি বলেন,

{ كَانَ يَوْمُ عَاشُورَاءَ تَعُدُّهُ الْيَهُودُ عِيدًا }

অর্থাৎ, আশুরার দিনকে ইহুদিরা ঈদ হিসাবে গ্রগণ করেছিল।
মুসলিমের রেওয়ায়াতে এসেছে,

{ كان يوم عاشوراء تعظمه اليهود تتخذه عيدا }

আশুরার দিনকে ইহুদিরা বড় করে দেখত (সম্মান করত), একে তারা ঈদ হিসাবে গ্রহণ করেছিল।
মুসলিমের অন্য বর্ণনায় এসেছে,

{ كان أهل خيبر ( اليهود ) يتخذونه عيدا، ويلبسون نساءهم فيه حليهم وشارتهم }.

খায়বর অধিবাসীরা (ইহুদিরা) আশুরার দিনকে ঈদ হিসাবে গ্রহণ করেছিল। তারা এদিন নিজ স্ত্রীদেরকে নিজস্ব অলঙ্কারাদি ও ব্যাজ পরিধান করাত।
তখন নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াল্লাম বললেন,
{ فَصُومُوهُ أَنْتُمْ }তাহলে তোমরাও রোজা রাখ। {বোখারি}
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সাহাবাদেরকে এদিনে রোজা রাখার নির্দেশ দানের আপাত কারণ হচ্ছে, ইহুদিদের বিরোধিতা করা। যেদিন তারা ঈদ উদযাপন করে ইফতার করবে সেদিন মুসলমানগণ রোজা রাখবে। কারণ ঈদের দিন রোজা রাখা হয় না। { সার-সংক্ষেপ, ফাতহুল বারি শারহুল বোখারি, আল্লামা ইবন হাজার আসকালানি}
আশুরার রোজার ফজিলত
আব্দুল্লাহ বিন আব্বাস রা. হতে বর্ণিত, তিনি বলেন,

{ مَا رَأَيْتُ النَّبِيَّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَتَحَرَّى صِيَامَ يَوْمٍ فَضَّلَهُ عَلَى غَيْرِهِ إِلّا هَذَا الْيَوْمَ يَوْمَ عَاشُورَاءَ، وَهَذَا الشَّهْرَ يَعْنِي شَهْرَ رَمَضَانَ }

আমি নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে রোজা রাখার জন্য এত অধিক আগ্রহী হতে দেখিনি যত দেখেছি এই আশুরার দিন এবং এই মাস অর্থাৎ রমজান মাসের রোজার প্রতি। {বোখারি:১৮৬৭}
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন,

{ صيام يوم عاشوراء، إني أحتسب على الله أن يكفر السنة التي قبله }

আশুরার দিনের রোজার ব্যাপারে আমি আল্লাহর কাছে আশা করি, তিনি পূর্ববর্তী এক বছরের পাপ ক্ষমা করে দেবেন। {সহিহ মুসলিম:১৯৭৬}
এটি আমাদের প্রতি মহান আল্লাহর অপার করুণা। তিনি একটি মাত্র দিনের রোজার মাধ্যমে পূর্ণ এক বছরের গুনাহ ক্ষমা করে দেন। সত্যই মহান আল্লাহ পরম দাতা।
বছরের কোন দিনটি আশুরার দিন
আল্লামা নববি রহ. বলেন, তাসুআ, আশুরা দু’টি মদ্দযুক্ত নাম। অভিধানের গ্রন্থাবলীতে এটিই প্রসিদ্ধ। আমাদের সাথীরা বলেছেন, আশুরা হচ্ছে মুহররম মাসের দশম দিন। আর তাসুআ সে মাসের নবম দিন। জমহুর ওলামারাও তা-ই বলেছেন। হাদিসের আপাতরূপ ও শব্দের প্রায়োগিক ও ব্যবহারিক চাহিদাও তাই। ভাষাবিদদের নিকট এটিই প্রসিদ্ধ। {আল-মজমূ}
এটি একটি ইসলামি নাম, জাহেলি যুগে পরিচিত ছিল না। {কাশ্শাফুল কান্না’ ২য় খন্ড, সওমুল মুহররম}
ইবনু কোদামাহ রহ. বলেন, আশুরা মুহররম মাসের দশম দিন। এটি সাঈদ ইবনুল মুসায়্যাব ও হাসান বসরি রহ.-এর মত। কারণ আব্দুল্লাহ বিন আব্বাস রা. বর্ণনা করেন,

{ أمر رسول الله – صلى الله عليه وسلم – بصوم يوم عاشوراء العاشر من المحرم }.

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আশুরা-মুহররমের দশম দিনে রোজা রাখার নির্দেশ দিয়েছেন। {বর্ণনায় তিরমিজি, তিনি বলেছেন, হাদিসটি হাসান সহিহ}
আশুরার সাথে তাসুআর রোজাও মুস্তাহাব
আব্দুল্লাহ বিন আব্বাস রা. বর্ণনা করেন,

{ حِينَ صَامَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَوْمَ عَاشُورَاءَ وَأَمَرَ بِصِيَامِهِ قَالُوا يَا رَسُولَ اللَّهِ، إِنَّهُ يَوْمٌ تُعَظِّمُهُ الْيَهُودُ وَالنَّصَارَى، فَقَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: “فَإِذَا كَانَ الْعَامُ الْمُقْبِلُ إِنْ شَاءَ اللَّهُ صُمْنَا الْيَوْمَ التَّاسِعَ”. قَالَ فَلَمْ يَأْتِ الْعَامُ الْمُقْبِلُ حَتَّى تُوُفِّيَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ }.

অর্থাৎ, যখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আশুরার রোজা রাখলেন এবং (অন্যদেরকে) রোজা রাখার নির্দেশ দিলেন। লোকেরা বলল, হে আল্লাহর রাসূল! এটিতো এমন দিন, যাকে ইহুদি ও খ্রিষ্টানরা বড় জ্ঞান করে, সম্মান জানায়। তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, আগামী বছর এদিন আসলে, আমরা নবম দিনও রোজা রাখব ইনশাল্লাহ। বর্ণনাকারী বলছেন, আগামী বছর আসার পূর্বেই রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ওফাত হয়ে গিয়েছে। {সহিহ মুসলিম:১৯১৪৬}
ইমাম শাফেয়ি ও তাঁর সাথীবৃন্দ, ইমাম আহমাদ, ইমাম ইসহাক প্রমুখ বলেছেন, আশুরার রোজার ক্ষেত্রে দশম ও নবম উভয় দিনের রোজাই মুস্তাহাব। কেননা নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দশ তারিখ রোজা রেখেছেন এবং নয় তারিখ রোজা রাখার নিয়ত করেছেন।
এরই উপর ভিত্তি করে বলা যায়, আশুরার রোজার কয়েকটি স্তর রয়েছে: সর্ব নিম্ন হচ্ছে কেবল দশ তারিখের রোজা রাখা। এরচে উচ্চ  পর্যায় হচ্ছে তার সাথে নয় তারিখের রোজা রাখা। এমনিভাবে মুহররম মাসে রোজার সংখ্যা যত বেশি হবে মর্যাদা ও ফজিলতও ততই বাড়তে থাকবে।
তাসুআর রোজা মুস্তাহাব হবার হিকমত
ইমাম নববি রহ. বলেন, তাসুআ তথা মুহররমের নয় তারিখ রোজা মুস্তাহাব হবার হিকমত ও উদ্দেশ্য প্রসঙ্গে প্রাজ্ঞ ওলামায়ে কেরাম বিভিন্ন মতামত ব্যক্ত করেছেন,
এক. এর উদ্দেশ্য হল, ইহুদিদের বিরোধিতা করা। কারণ তারা কেবল একটি অর্থাৎ দশ তারিখ রোজা রাখত।
দুই. আশুরার দিনে কেবলমাত্র একটি রোজা পালনের অবস্থার উত্তরণ ঘটিয়ে তার সাথে অন্য একটি রোজার মাধ্যমে সংযোগ সৃষ্টি করা। যেমনিকরে এককভাবে জুমুআরা দিন রোজা রাখতে নিষেধ করা হয়েছে। এটি আল্লামা খাত্তাবি ও অন্যান্যদের মত।
তিন. দশ তারিখের রোজার ক্ষেত্রে চন্দ্র গণনায় ত্রুটি হয়ে ভুলে পতিত হবার আশংকা থেকে বাঁচার উদ্দেশ্যে। হতে পারে গণনায় নয় তারিখ কিন্তু বাস্তবে তা দশ তারিখ।
এর মধ্যে সর্বাধিক শক্তিশালী তাৎপর্য হচ্ছে, আহলে কিতাবের বিরোধিতা করা। শায়খুল ইসলাম ইবনু তাইমিয়া রহ. বলেছেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বহু হাদিসে আহলে কিতাবদের সাদৃশ্য অবলম্বন করতে নিষেধ করেছেন। যেমন আশুরা প্রসঙ্গে নবীজী বলেছেন, { لَئِنْ عِشْتُ إلَى قَابِلٍ لاَصُومَنَّ التَّاسِعَ }আমি যদি আগামী বছর বেঁচে থাকি তাহলে অবশ্যই নয় তারিখ রোজা রাখব। { আল-ফতোয়াল কোবরা, খন্ড:৬}
আল্লামা ইবন হাজার রহ.

{ لئن بقيت إلى قابل لأصومن التاسع }

আমি যদি আগামী বছর বেঁচে থাকি তাহলে অবশ্যই নয় তারিখ রোজা রাখব। হাদিসের তালিকে বলেছেন,
নবীজীর নয় তারিখে রোজা রাখার সংকল্প ব্যক্ত করার উদ্দেশ্য কিন্তু এই নয় যে, তিনি কেবল নয় তারিখে রোজার রাখার সংকল্প করেছেন বরং তাঁর উদ্দেশ্য হচ্ছে, দশ তারিখের রোজার সাথে নয় তারিখের রোজাকে সংযুক্ত করা। সাবধানতা বশত: কিংবা ইহুদি খ্রিষ্টানদের বিরোধিতার জন্য। এটিই অগ্রাধিকার প্রাপ্ত মত। সহিহ মুসলিমের কতিপয় বর্ণনা এদিকেই ইংগিত করে। {ফাতহুল বারি:৪/২৪৫}
শুধু দশ তারিখ রোজা রাখার বিধান
শায়খুল ইসলাম বলেন, আশুরার রোজা এক বছরের গুনাহের কাফ্ফারা আর আশুরার একটিমাত্র রোজা মাকরূহ হবে না। {আল-ফাতাওয়াল কোবরা: ৫ম খন্ড}
ইবনু হাজার হায়সামী রচিত তুহফাতুল মুহতাজ গ্রন্থে আছে, আশুরা উপলক্ষে দশ তারিখ কেবল একটি রোজা রাখাতে কোনো দোষ নেই। {তয় খন্ড, বাবু সওমিত তাতাব্বু’}
নির্ধারিত দিনটি শনি কিংবা জুমুআ বার হলেও আশুরার রোজা রাখা হবে
কেবলমাত্র জুমুআর দিনকে নফল রোজার জন্য নির্ধারণ করা মাকরূহ, অনুরূপভাবে ফরজ রোজা ব্যতীত শনিবার রোজা রাখতে নিষেধ করা হয়েছে। তবে নিম্নের যে কোনো পদ্ধতির অনুকূলে রাখা হলে আর মাকরূহ হবে না। যেমন ঐ দুই দিনের সাথে মিলিয়ে আরো একদিন করে  রোজা রাখা। দিনটি অনুমোদিত অভ্যাসের অনুকূলে পড়ে যাওয়া যেমন একদিন রোজা রাখা একদিন ইফতার করা। মান্নত কিংবা কাজার রোজা হওয়া। অথবা শরিয়ত রোজা রাখতে উৎসাহিত করেছে এমন তারিখে ঐ দিনদ্বয় পড়ে যাওয়া যেমন আরাফা কিংবা আশুরার দিন…। {তুহফাতুল মুহতাজ, ৩য় খন্ড, বাবু সওমিত তাতাব্বু’, মুশকিলুল আছার, ২য় খন্ড, বাবু সওমি য়াওমিস সাবতি}
আল্লামা বাহুতি রহ. বলেন, শুধুমাত্র শনিবারকে রোজা রাখার জন্য নির্ধারণ করা মাকরূহ। কারণ এ প্রসঙ্গে হাদিসে নিষেধাজ্ঞা আরোপ হয়েছে। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,

{ لا تَصُومُوا يَوْمَ السَّبْتِ إلّا فِيمَا اُفْتُرِضَ عَلَيْكُمْ }

ফরজ রোজা ব্যতীত তোমরা কেবল শনিবার রোজা রাখবে না।{বর্ণনায় আহমাদ ও হাকেম}
তাছাড়া শনিবারকে ইহুদিরা খুব সম্মান করে, অনেক বড় করে দেখে, তাই সেদিন রোজা রাখলে তাদের তাশাব্বুহ তথা সাদৃশ্যাবলম্বন হয়ে যাবে…। তবে শুক্র বা শনিবার যদি কোনো ব্যক্তির অনুস্মৃত অভ্যাসের আওতায় পড়ে যায় তাহলে আর মাকরূহ হবে না। যেমন   এক ব্যক্তি নিয়মিত আরাফা ও আশুরার রোজা পালন করে আর সেই আরাফা কিংবা আশুরার দিন শনি কিংবা শুক্রবার দিন সংঘটিত হল তাহলে সে ব্যক্তির জন্য উক্ত শুক্র কিংবা শনিবার রোজা রাখা মাকরূহ হবে না। কেননা এসব ক্ষেত্রে অভ্যাসকে বিবেচনায় রাখা হয়…। {কাশ্শাফুল কান্না’, ২য় খন্ড, বাবু সওমিত তাতাব্বু’}
মাসের শুরু অস্পষ্ট হয়ে গেলে করণীয় কি?
ইমাম আহমদ রহ. বলেন, মাসের শুরু নিয়ে সন্দেহ দেখা দিলে কিংবা সেটি অস্পষ্ট হয়ে গেলে সে মাসে আশুরার রোজা তিনদিন রাখা হবে। আর এমনটি করা হবে কেবল নয় ও দশ তারিখের রোজাকে নিশ্চিত করার জন্য। {আল-মুগনি লি ইবনে কোদামাহ, ৩য় খন্ড, সিয়ামু আশুরা}
সুতরাং যে ব্যক্তি মুহররম মাসের আগমণ সম্বন্ধে বুঝতে পারেনি এবং সে দশ তারিখের ব্যাপারে সাবধানতা অবলম্বন করতে ইচ্ছুক তাহলে সে নিয়মমত জিল হজ্জকে ত্রিশ দিন গণনা করবে। অত:পর নয় ও দশ তারিখ রোজা রাখবে। আর যে ব্যক্তি নয় তারিখের ব্যাপারেও সাবধানতা অবলম্বন করতে চাইবে সে আট, নয় ও দশ তারিখ মোট তিন দিন রোজা রাখবে। ( এখন যদি জিল হজ্জ মাস নাকেস অর্থাৎ ত্রিশ দিন থেকে কম হয় তাহলে সে নিশ্চিত তাসুআ ও আশুরার রোজা রাখতে সক্ষম হবে) তবে এখানে মনে রাখা দরকার, আশুরার রোজা কিন্তু মুস্তাহাব ফরজ নয়। তাই লোকদেরকে রমজান ও শাওয়াল মাসের মত মুহররম মাসের চাঁদ তালাশ করার নির্দেশ দেয়া হবে না।
আশুরার রোজা কোন ধরনের পাপের জন্য কাফ্ফারা?
ইমাম নববি রহ. বলেন, আশুরার রোজা সকল সগিরা গুনাহের কাফ্ফারা। অর্থাৎ এ রোজার কারণে মহান আল্লাহ কবিরা নয় বরং (পূর্ববর্তী একবছরের) যাবতীয় সগিরা গুনাহ ক্ষমা করে দেবেন।
এর পর তিনি বলেন, আরাফার রোজা দুই বছরের (গুনাহের জন্য) কাফ্ফারা, আশুরার রোজা এক বছরের জন্য কাফ্ফারা, যার আমীন ফেরেশতাদের আমীনের সাথে মিলে যাবে তার পূর্ববর্তী গুনাহ ক্ষমা করে দেয়া হবে… হাদিসে বর্ণিত এসব গুনাহ মাফের অর্থ হচ্ছে, ব্যক্তির আমলনামায় যদি সগিরা গুনাহ থেকে থাকে তাহলে এসব আমল তার গুনাহের কাফ্ফারা হবে অর্থাৎ আল্লাহ তার সগিরা গুনাহসমূহ ক্ষমা করে দেবেন। আর যদি সগিরা-কবিরা কোনো গুনাহই না থাকে তাহলে এসব আমলের কারণে তাকে সাওয়াব দান করা হবে, তার দরজাত বুলন্দ করা হবে। আর আমলনামায় যদি শুধু কবিরা গুনাহ থাকে সগিরা নয় তাহলে আমরা আশা করতে পারি, এসব আমলের কারণে তার কবিরা গুনাহসমূহ হালকা করা হবে। {আল-মাজমূ শারহুল মুহাযযাব, ষষ্ঠ খন্ড, সওমু য়াওমি আরাফা}
শায়খুল ইসলাম ইবনু তাইমিয়া রহ. বলেন, পবিত্রতা অর্জন, সালাত, রমজান, আরাফা ও আশুরার রোজা ইত্যাদি কেবল সগিরা গুনাহসমূহের কাফ্ফারা অর্থাৎ এসব আমলের কারণে কেবল সগিরা গুনাহ ক্ষমা করা হয়। {আল-ফাতাওয়াল কোবরা, ৫ম খন্ড}
রোজার সাওয়াব দেখে প্রতারিত হওয়া চলবে না
আরাফা কিংবা আশুরার রোজার উপর নির্ভর করে অনেক বিভ্রান্ত লোক ধোঁকায় পড়ে যায়। আত্ম প্রতারিত হয়। এমনকি অনেককে বলতে শোনা যায়, আশুরার রোজার কারণে পূর্ণ এক বছরের পাপ ক্ষমা হয়ে গিয়েছে। বাকি থাকল আরাফার রোজা, তো সেটি সাওয়াবের ভাণ্ডার সমৃদ্ধ করবে।
আল্লামা ইবনুল কাইয়্যিম রহ. বলেন, এ আত্ম প্রবঞ্চিত-বিভ্রান্ত লোকটি বুঝল না যে, রমজানের রোজা ও পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ আরাফা ও আশুরার রোজার চেয়ে বহু গুণে বড় ও অধিক সাওয়াব যোগ্য ইবাদত। আর এগুলো মধ্যবর্তী গুনাহসমূহের জন্য কাফ্ফারা তখনই হয় যদি কবিরা গুনাহসমূহ থেকে বেঁচে থাকা হয়। সুতরাং এক রমজান থেকে পরবর্তী রমজান এবং এক জুমুআ থেকে পরবর্তী জুমুআ, মধ্যবর্তী সময়ে কৃত পাপের জন্য কাফ্ফারা তখনই হবে যখন কবিরা গুনাহ ত্যাগ করা হবে। উভয়বিধ কার্য সম্পাদনের মাধ্যমেই কেবল সগিরা গুনাহ মাফ হবে।
আবার কিছু বিভ্রান্ত লোক আছে, যারা ধারণা করে, তাদের নেক আমল বদ আমল থেকে বেশি। কারণ তারা গুনাহের ভিত্তিতে নিজেদের হিসাব নেয় না। এবং পাপাচার গণনায় আনে না। যদি কখনো কোনো নেক আমল সম্পাদন করে তখন কেবল তাই সংরক্ষণ করে। এরা সেসব লোকদের ন্যায় যারা মুখে মুখে ইস্তেগফার করে অথবা দিনে একশত বার তাসবিহ পাঠ করে অত:পর মুসলমানদের গিবত ও সম্মান বিনষ্টের কাজে লেগে যায়। সারা দিন আল্লাহর অসন্তুষ্টি মূলক কাজে অতিবাহিত করে। এসব লোক তাসবিহ তাহলিলের ফজিলত সম্বন্ধে খুব ফিকির করে। কিন্তু তার মাধ্যমে সংঘটিত অন্যায় ও পাপকর্মের প্রতি মোটেই দৃষ্টিপাত করে না। এটিতো কেবলই ধোঁকা ও আত্ম প্রতারণা। {আল-মওসুআতুল ফিকহিয়্যাহ, খন্ড ১৩, গুরুর}
রমজানের কাজা অনাদায়ি থাকা অবস্থায় আশুরার রোজার হুকুম কি?
রমজানের কাজা আদায় না করে নফল রোজা রাখা যাবে কিনা এ ব্যাপারে ওলামাদের মাঝে এখতেলাফ আছে। হানাফিদের নিকট জায়েয। কেননা রমজানের কাজা  সম্পন্ন করা তাৎক্ষণিকভাবে ওয়াজিব নয়। বিলম্বে সম্পন্ন করার অবকাশ আছে। শাফেয়ি ও মালেকিদের নিকটও জায়েয তবে মাকরূহ হবে। কারণ এতে ওয়াজিব আদায় বিলম্বিত হয়।
আল্লামা দুসূকি রহ. বলেন, মান্নত, কাজা ও কাফ্ফারা জাতীয় ওয়াজিব রোজা অনাদায়ি রেখে নফল রোজা পালন করা মাকরূহ। সে নফল রোজাটি গাইরে মুআক্কাদাহ হোক কিংবা মুআক্কাদাহ যেমন আশুরা, জিল হজ্জের নয় তারিখের রোজা ইত্যাদি।
হাম্বলি ইমামগণের মতে রমজানের কাজা আদায় করার পূর্বে নফল রোজা পালন করা হারাম। এমতাবস্থায় কেউ নফল রোজা রাখলে সহিহ হবে না এমনকি পরবর্তীতে কাজা আদায় করার মত পর্যাপ্ত সময় থাকলেও। বরং আগে ফরজ আদায় করতে হবে। { আল-মওসুআ আল-ফিকহিয়্যাহ, খন্ড ২৮, সওমুত তাতাব্বু’}
সুতরাং প্রতিটি মুসলমানের কর্তব্য হচ্ছে, রমজানের পরপরই বিলম্ব না করে কাজা সম্পন্ন করে নেওয়া। যাতে কোনোরূপ সমস্যা ছাড়াই আরাফা ও আশুরার রোজা পালনের সুযোগ পাওয়া যায়। কেউ যদি আরাফা ও আশুরার রোজায় কাজা আদায়ের নিয়ত করে -এবং এ নিয়ত রাত্র হতেই করে- তাহলে সেটি তার জন্য যথেষ্ট হবে। অর্থাৎ তার কাজা আদায় হয়ে যাবে। আল্লাহর করুণা অনেক বিশাল।

আশুরায় উদযাপিত কিছু বেদআত
আশুরার দিন লোকেরা সুরমা লাগানো, গোসল করা, মেহেদি লাগানো, মুসাফাহা করা, খিচুড়ি রান্না করা, আনন্দ উৎসবসহ বিভিন্ন অনুষ্ঠানাদির আয়োজন করে থাকে এ সম্বন্ধে শায়খুল ইসলাম ইবনু তাইমিয়া রহ. কে প্রশ্ন করা হল, এর কোনো ভিত্তি আছে কি না?
জবাবে তিনি বললেন, এসব অনুষ্ঠানাদি উদযাপন প্রসঙ্গে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে সহিহ কোনো হাদিস বর্ণিত হয়নি এবং সাহাবাদের থেকেও না। চার ইমামসহ নির্ভরযোগ্য কোনো আলেমও এসব কাজকে সমর্থন করেননি। কোনো মুহাদ্দিস এ ব্যাপারে রাসূলুল্লাহ ও সাহাবাদের থেকে কোনো সহিহ কিংবা জয়িফ হাদিসও বর্ণনা করেননি। তাবিয়ীদের থেকেও কোনো আছর পাওয়া যায়নি। পরবর্তী যুগে কেউ কেউ কিছু বানোয়াট ও জাল হাদিস বর্ণনা করেছে যেমন, ‘যে ব্যক্তি আশুরার দিন সুরমা লাগাবে সে ব্যক্তি সে বছর থেকে চক্ষুপ্রদাহ রোগে আক্রান্ত হবে না’। ‘ যে ব্যক্তি আশুরার দিন গোসল করবে সে সেই বছর থেকে আর রোগাক্রান্ত হবে না। এরূপ অনেক হাদিস। এরই ধারাবাহিকতায় তারা একটি মওজু হাদিস বর্ণনা করেছে। যা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসালল্লামের প্রতি মিথ্যারোপ ব্যতীত আর কিছুই নয়। হাদিসটি হচ্ছে,
{ أَنَّهُ مَنْ وَسَّعَ عَلَى أَهْلِهِ يَوْمَ عَاشُورَاءَ وَسَّعَ اللَّهُ عَلَيْهِ سَائِرَ السَّنَةِ }
অর্থাৎ, যে ব্যক্তি আশুরার দিন নিজ পরিবারের উপর উদার হাতে খরচ করবে আল্লাহ তাআলা সারা বছরের জন্য তাকে সচ্ছলতা দান করবেন।
এ ধরণের সবগুলো বর্ণনা মিথ্যা ও জাল।
অত:পর শায়খ উল্লেখ করেছেন, -যার সার সংক্ষেপ হচ্ছে- এ উম্মতের অগ্রজদের উপর যখন সর্ব প্রথম ফেতনা আপতিত হল ও হোসাইন রাদিয়াল্লাহু আনহু’র শাহাদাত সঙ্ঘটিত হল। এর কারণে বিভিন্ন দলের লোকেরা কি করল? তিনি বলেন,
তারা জালেম ও জাহেলদের দলে রাপান্তরিত হল। হয়ত মুনাফিক বেদ্বীন নয়ত বিভ্রান্ত বিপথগামী। তাঁর বন্ধুত্ব ও আহলে বাইতের বন্ধুত্ব প্রকাশ করতে লাগল। আশুরার দিনকে রোলবিল, কান্নাকাটি ও শোক দিবস হিসাবে গ্রহণ করল। তাতে তারা বুক ও চেহারা চাপড়ানো, আস্তিন ছেড়াসহ জাহেলি যুগের বিভিন্ন প্রথা প্রকাশ করতে লাগল। বিভিন্ন শোকগাথা যার অধিকাংশই বানোয়াট ও মিথ্যায় পরিপূর্ণ ও গীত আবৃত্তি করতে লাগল। এর ভেতর সত্যের কিছুই নেই আছে শুধু স্বজনপ্রীতি ও মনোকষ্টের নবায়ন। মুসলমানদের পরস্পরে যুদ্ধ ও দুশমনি সৃষ্টির পায়তারা। পূর্ববর্তী পূন্যাত্মা সাহাবিদের গালমন্দ করার উপাদান। মুসলমানদের বিরুদ্ধে তাদের অনিষ্টি ও ক্ষতির পরিসংখ্যান কেউ লিখে শেষ করতে পারবে না। তাদের মোকাবেলা করেছে হয়ত আহলে বাইত ও হোসাইন রা. -এর ব্যাপারে বাড়াবাড়িতে লিপ্ত নাসেবি সম্প্রদায় অথবা একদল জাহেল সম্প্রদায়। যারা ফাসেদের মোকাবেলা করেছে ফাসেদ দিয়ে। মিথ্যার মোকাবেলা মিথ্যার মাধ্যমে, খারাপের জবাব দিয়েছে খারাপ দিয়ে এবং বেদআতের জবাব বেদআতের মাধ্যমে।
ইবনুল হাজ্জ রহ. বলেন, আশুরার বেদআতের আরো একটি হচ্ছে, তাতে জাকাত আদায় করা। বিলম্বিত কিংবা অগ্রীম। মুরগি জবাইর জন্য একে নির্ধারণ করা। নারীদের মেহেদি ব্যবহার করা। {আল-মাদখাল, ১ম খন্ড, য়াওমু আশুরা}
আল্লাহ তাআলা আশুরাসহ যাবতীয় কর্মে আমাদেরকে রাসূলুল্লাহর আদর্শের পূর্ণ অনুবর্তনের তাওফিক দান করুন।

‘আপনিও হোন ইসলামের প্রচারক’
প্রবন্ধের লেখা অপরিবর্তন রেখে এবং উৎস উল্লেখ্য করে
আপনি Facebook, Twitter, ব্লগ, আপনার বন্ধুদের Email Address সহ অন্য Social Networking ওয়েবসাইটে শেয়ার করতে পারেন, মানবতার মুক্তির লক্ষ্যে ইসলামের আলো ছড়িয়ে দিন। “কেউ হেদায়েতের দিকে আহবান করলে যতজন তার অনুসরণ করবে প্রত্যেকের সমান সওয়াবের অধিকারী সে হবে, তবে যারা অনুসরণ করেছে তাদের সওয়াবে কোন কমতি হবেনা” [সহীহ্ মুসলিম: ২৬৭৪]